পুলিশের হাতে তিন শিক্ষার্থী আটকের প্রতিবাদে উত্তরা থানায় উত্তেজনা
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা চত্বরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিন শিক্ষার্থীকে আটক করার ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও এবং পরে উত্তরা পশ্চিম থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের থানায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহাদেবের ওপর হামলা হয় বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম অ্যাভিনিউতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের একটি সভা চলাকালে আকাশ, রবিন এবং বাপ্পি নামের তিন শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করে। পরে তাদের উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে উত্তরা পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়।
এই আটকের খবর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা প্রথমে উত্তরা পূর্ব থানায় জড়ো হন এবং তিন শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা উত্তরা পশ্চিম থানায় ফিরে এসে থানার গেটে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং সেখানে হামলা চালান।
“আমাদের সহপাঠী আকাশ, রবিন এবং বাপ্পিকে আটক করে পূর্ব থানায় নেওয়া হয়। আমরা সেখানে গিয়ে জানতে পারি, আসলে তাদের পশ্চিম থানা পুলিশ আটক করেছে এবং পূর্ব থানার হেফাজতে রেখেছে। এ খবর পেয়ে আমরা উত্তেজিত হয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ করেছি। পরে থানার গেটে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করি।”
থানার ভেতরে হামলার ঘটনা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের বিষয়টি পুলিশও নিশ্চিত করেছে। উত্তরা পশ্চিম থানার এক কর্মকর্তা জানান,
“ছাত্রদের বিক্ষোভ সামাল দিতে আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমরা বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চেষ্টা করেছি।”
উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,
“হামলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হয়।”
পরবর্তীতে উত্তরা পূর্ব থানার কম্পিউটার ল্যাব রুমে উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহম্মেদ আলী, এবং সহকারী কমিশনার সাদ্দাম হোসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
পুলিশ শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আলোচনায় শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের মুক্তির দাবি জানান এবং পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
এ ধরনের সংঘর্ষ রাজধানীর মতো জায়গায় বিরল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের এ ধরনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।
“শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলার আগেই উত্তেজিত হয়ে থানায় হামলা চালিয়েছে। তবে আমরা সহনশীল অবস্থান বজায় রেখে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছি।”
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিশেষত অধিকার আদায় এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই আন্দোলনে সরব হয়। উত্তরা পশ্চিম থানার এ ঘটনা ছাত্র আন্দোলনের সাম্প্রতিক সংযোজন।
“বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশের আরও সংবেদনশীল ভূমিকা রাখা জরুরি। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও সংযত থাকা উচিত, যাতে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল না হয়।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন করে কিছু নির্দেশনা জারি হতে পারে বলে জানা গেছে। ছাত্রদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং সহমর্মিতামূলক আচরণ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে,
“আমাদের সঙ্গে অন্যায়ভাবে আচরণ করা হয়েছে। পুলিশ যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে কাজ করে।”
উত্তরা পশ্চিম থানার ঘটনাটি রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয়। পুলিশের হাতে শিক্ষার্থী আটক এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি এবং পুলিশের পদক্ষেপ—দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমেই এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।