ধানমন্ডিতে ডিবি পুলিশের অভিযান, দুদকের মামলায় গ্রেফতার
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার ভিত্তিতে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঠিক কী অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিন রাত ১০টার দিকে ধানমন্ডি এলাকায় ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযানটি ছিল সুপরিকল্পিত এবং হঠাৎ করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক। এছাড়া তিনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময়ে পুঁজিবাজারে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
বিএসইসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যদিও তার সময়ে কিছু বিতর্কও সামনে আসে, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়।
দুদক সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করছে। পুঁজিবাজারের আর্থিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সংস্থাটি। ধারণা করা হচ্ছে, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলাটি এসব তদন্তেরই অংশ।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের গ্রেফতারের খবরে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এ ঘটনাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেছেন, আবার অনেকেই বিষয়টিকে বিস্ময়কর বলে মনে করছেন।
“বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যানের গ্রেফতার পুঁজিবাজারের ওপর সাময়িক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি।”
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের গ্রেফতারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহলও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
“আমরা চাই সত্য উদ্ঘাটন হোক। যদি কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তবে তদন্তটি অবশ্যই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হতে হবে।”
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের গ্রেফতারকে ঘিরে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন, আবার অনেকে বলছেন এটি একটি স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশে এর আগেও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। তবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মতো একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের গ্রেফতার দেশের শিক্ষাঙ্গন এবং আর্থিক খাতের জন্য একটি বড় ঘটনা।
ডিবি পুলিশ এবং দুদক থেকে জানা গেছে, শিবলী রুবাইয়াতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নেওয়া হতে পারে। পরবর্তী সময়ে তাকে আদালতে তোলা হবে এবং মামলার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
“এ ধরনের মামলায় তদন্ত সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। প্রাথমিক গ্রেফতার শুধু একটি ধাপ। মূল বিষয় হলো তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করা।”
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের গ্রেফতার দেশের পুঁজিবাজার এবং শিক্ষা খাতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঘটনা নিয়ে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা মহল এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নজর রাখছেন। সুষ্ঠু তদন্ত এবং স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।