স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় পাসপোর্ট জটিলতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশে পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকরা ভেরিফিকেশন জটিলতার সম্মুখীন হয়ে আসছেন। এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সরকার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়ার ভেরিফিকেশন বাধ্যবাধকতা বাতিলের বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
এর আগে, একই দিন সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উদ্যোগে পাসপোর্ট ইস্যুর জটিলতা নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নাসিমুল গণি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উঠে আসে, পাসপোর্ট ইস্যুর মূল ভিত্তি হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং জন্ম নিবন্ধন। যদি এ দুটি নথি সঠিক থাকে, তাহলে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া আর প্রয়োজন হবে না। এতে পাসপোর্ট ইস্যু দ্রুততর এবং সহজতর হবে বলে সভায় মতামত ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সভায় বেশিরভাগ প্রতিনিধি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পুলিশের বিশেষ শাখাসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির মধ্যে ছিলেন:
সভায় পাসপোর্ট ইস্যুতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন যাচাইয়ের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সরলীকরণের সুপারিশ করা হয়। ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাদ দিলে পাসপোর্ট ইস্যুতে সময় অনেকটাই কমে আসবে। একইসঙ্গে দুর্নীতি ও হয়রানি কমানোর সুযোগ তৈরি হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পাসপোর্টে ভেরিফিকেশন জটিলতা নিরসনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব সুপারিশ চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হলে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া আরও কার্যকর ও জনবান্ধব হবে।
ই-পাসপোর্ট এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় নাগরিকরা প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই জটিলতা দূর করতে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিলের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন, ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিল হলে পাসপোর্ট পেতে আর কোনো ধরনের দেরি বা হয়রানির শিকার হতে হবে না। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে প্রবাসী কর্মীসহ সাধারণ নাগরিকদের জন্য এটি হবে বড় একটি অগ্রগতি।
ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিল হলে যে পরিবর্তনগুলো আসতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে:
- দ্রুত পাসপোর্ট ইস্যু – বর্তমান প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট ইস্যুতে একাধিক ধাপে যাচাই করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। ভেরিফিকেশন বাদ দিলে এটি দ্রুত সম্পন্ন হবে।
- হয়রানি হ্রাস – ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় প্রায়ই দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ আসে। এই প্রক্রিয়া সরল হলে এ ধরনের সমস্যাও কমবে।
- খরচ কমানো – ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাদ দিলে নাগরিকদের আর বাড়তি খরচ করতে হবে না।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে।
নাগরিকদের আশা, নতুন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে পাসপোর্ট ইস্যু আরও সহজ হবে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে। একইসঙ্গে প্রবাসী কর্মী ও বিদেশগামীদের জন্য এটি হবে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন।