ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি: দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার যেকোনো প্রচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যুদ্ধকালীন সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ সতর্কবার্তা দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ বিজিবি, র্যাব, ডিএমপি, কোস্টগার্ড ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠকে চলতি বছরকে দেশের জন্য সংকটময় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করব না। নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমান্ড সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত হস্তক্ষেপের সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেন। একইসঙ্গে বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে কেন্দ্রীয় কমান্ড হেডকোয়ার্টার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গত জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠনের পরপরই রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
তবে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করার নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট ও লাগাতার আন্দোলনের ফলে ২০২৪ সাল নানা উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। নতুন বছরেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের ঢেউ অব্যাহত রয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে চলমান অবস্থান কর্মসূচি।
প্রধান উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, “ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সহযোগীরা বিশৃঙ্খলা ও অপপ্রচার চালাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।” তিনি বলেন, “আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা প্রতিহত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্র। এখানে সব ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। আমরা কোনো উগ্রবাদী শক্তিকে সহ্য করব না।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকারের কঠোর অবস্থান সামনের দিনগুলোতে আরও দৃঢ় হতে পারে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন নজরদারির আওতায় রয়েছে, এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার আপসহীন অবস্থানে থাকবে।
সংবাদটি সর্বশেষ আপডেট: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।