রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত মুন্নার হত্যাকাণ্ড: সাবেক মন্ত্রীর গ্রেপ্তার ও রিমান্ড
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মাহমুদুল হাসান মুন্নার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। শুক্রবার সকালে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবী রানী তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক মন্ত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার সময় তাকে হাতকড়া পরানো হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তারা পুলিশি গাড়ি আটকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে চাপের মুখে পুলিশ তাকে হাতকড়া পরায়। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, হত্যা এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাহমুদুল হাসান মুন্না নিহতের ঘটনায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার ছেলে সহ মোট ১২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলাটি গত বছরের ২৯ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালী আমলি আদালতে দায়ের করেন মুন্নার বাবা আব্দুল মজিদ।
এই মামলার ভিত্তিতে পুলিশ গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে নগরীর স্টেশন বাবুপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের নেতা আল-আমিন হোসেনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন।
এর আগে, গত বছরের ২৭ অক্টোবর একই মামলায় সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুকে কালীগঞ্জ বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে লালমনিরহাট জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্যের দাবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলনে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে সাম্য প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। মাহমুদুল হাসান মুন্নার মৃত্যু আন্দোলনটিকে আরও উজ্জীবিত করেছে এবং বিচার দাবি জোরালো হয়েছে।
সরকার এই আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীদের দাবি, দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জনগণের দাবি অনুযায়ী দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে। আন্দোলনকারীরা এই মামলার দ্রুত ও সঠিক বিচার চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।