শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল, সরকারের কোষাগারে জমা হবে বিক্রিত অর্থ
শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা বাতিল হওয়ার পর অবশেষে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক ২৪ সংসদ সদস্যের বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে। উচ্চ সিসির এই গাড়িগুলোর বিক্রির অর্থ জমা হবে সরকারি কোষাগারে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার তালুকদার জানিয়েছেন, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে ই-অকশনের ওয়েবসাইটে নিলামের ক্যাটালগ দেখা যাচ্ছে। আগ্রহীরা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত অনলাইনে দর জমা দিতে পারবেন। পরের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় দরপত্রের বাক্স খোলা হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এবারের নিলামে মোট ৪৪টি গাড়ি তোলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ২৬টি জাপানের তৈরি ল্যান্ড ক্রুজার
- ৫টি টয়োটা হ্যারিয়ার
- ২টি টয়োটা র্যাভ ফোর
- ১টি টয়োটা এস্কোয়ার
- ১০টি চীনের তৈরি সিনো ডাম্প ট্রাক
নিলামের জন্য গাড়িগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বিপরীতে নতুন কার শেডে রাখা হয়েছে। আগ্রহীরা আগামী ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই গাড়িগুলো দেখতে পারবেন।
২০১৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনের পর এই সুবিধা বাতিল হয়। গত পাঁচ মাসে মাত্র একজন সাবেক সংসদ সদস্য শুল্ক পরিশোধ করে গাড়ি খালাস করেছেন। বাকি গাড়িগুলো বন্দরে আটকে ছিল।
কাস্টমসের তথ্যমতে, একটি গাড়ি আমদানিতে সাবেক সংসদ সদস্যরা ৯৫ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন। তবে শুল্ক পরিশোধ না করায় এই গাড়িগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে। ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি একদম নতুন অবস্থায় রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস গাড়িগুলোর সংরক্ষিত মূল্য ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। নিলামের প্রথম ধাপে গাড়ি কেনার জন্য সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ বা তার বেশি দর প্রস্তাব করতে হবে। প্রতিটি গাড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা পড়বে, যা ২৫ শতাংশ শুল্ক করসহ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিলামে সবচেয়ে দামি গাড়িটি আমদানি করেছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের এই গাড়ির আমদানি মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং শুল্ক কর ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, সবচেয়ে কম দামি গাড়িটি এনেছিলেন ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামান। টয়োটা মডেলের এই গাড়িটির আমদানি মূল্য ৬৮ লাখ টাকা এবং শুল্ক কর ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
নিলামে তোলা গাড়িগুলোর মালিকদের মধ্যে রয়েছেন:
- মোহাম্মদ সাদিক
- এ বি এম আনিসুজ্জামান
- মোহাম্মদ আলী আরাফাত
- মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
- মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর
- সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
- অনুপম শাহজাহান জয়
- সাজ্জাদুল হাসান
- সাদ্দাম হোসেন (পাভেল)
- নাসের শাহরিয়ার জাহেদী
- আবুল কালাম আজাদ
- আবদুল মোতালেব
- মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ
- তৌহিদুজ্জামান
- শাহ সারোয়ার কবীর
- এস এ কে একরামুজ্জামান
- এস এম আল মামুন
- এস এম কামাল হোসেন
- মুজিবুর রহমান
- আসাদুজ্জামান
- আখতারউজ্জামান
সরকার পতনের পর সাবেক সংসদ সদস্যদের অনেকেই তড়িঘড়ি করে গাড়ি খালাসের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে শুল্ক না দেওয়ায় কাস্টমস তাদের গাড়ি জব্দ করে।
নিলামে তোলা গাড়িগুলোর বিক্রির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে উল্লেখযোগ্য অর্থ জমা হবে। শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার এবং ক্ষমতার পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগ্রহী ক্রেতারা অনলাইনে অংশগ্রহণ করে এই বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে পারবেন।