স্বামীসহ তিনজন জিজ্ঞাসাবাদে আটক
মাদারীপুরের শিবচরের একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে মনিকা আক্তার (১৮) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী রিয়াদ আহমেদ বেপারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে সদ্য ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট থেকে এই দুঃখজনক ঘটনার খবর পাওয়া যায়।
নিহত মনিকা আক্তার মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মো. কাসেম মিয়ার মেয়ে। সাত মাস আগে তিনি রিয়াদ আহমেদ বেপারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পরিচয় হয় একটি কয়েল কারখানায় কাজ করার সুবাদে, যেখানে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিবাহের পর তারা শিবচরের গুয়াতলা গ্রামে একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নেন।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিয়াদ ও মনিকা নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে শিবচর পৌরসভার গুয়াতলা গ্রামের পশু হাসপাতাল সংলগ্ন লাবলু মুন্সির বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন। শুক্রবার সকালে রিয়াদ আহমেদ তার এক আত্মীয়কে নিয়ে বাজারে নাশতা করতে বের হন। নাশতা শেষে মনিকার জন্য খাবার নিয়ে বাসায় ফিরে এসে দেখেন, একটি রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।
অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া না পেয়ে তারা বাড়ির মালিক লাবলু মুন্সিকে বিষয়টি জানান। বাড়ির মালিক শিবচর থানায় যোগাযোগ করলে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শিবচর থানার ওসি মো. রতন শেখের নেতৃত্বে একটি দল দরজা ভেঙে মনিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
শিবচর থানার ওসি রতন শেখ জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। তবে পুলিশ বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী রিয়াদ আহমেদ এবং তার দুই আত্মীয়কে আটক করা হয়েছে।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দম্পতি সম্প্রতি এই এলাকায় বাস করতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়ার খবর শোনা যায়নি। মনিকার আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, মনিকার মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। পুলিশ এই বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত করছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা আরও পরিষ্কার হবে।
মনিকার মৃত্যু একটি দুঃখজনক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে সহমর্মিতার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজসেবী সংগঠনগুলোকে এই বিষয়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
শিবচরের মনিকা আক্তারের মৃত্যুর ঘটনাটি পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে। পুলিশের তদন্ত এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন হবে বলে আশা করা যায়। একই সঙ্গে সমাজের সবাইকে মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে।