ঢাকা: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মরুকরণ ঠেকাতে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন বাংলাদেশ-চীন-ভারত কূটনীতির দিকে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের আসন্ন বেইজিং সফর এবং মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ঘিরে আলোচনা চলছে।
ভারতের একতরফা পানি আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানির প্রবাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সংকট নিরসনে চীন আগেই তিস্তা প্রকল্পে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল এবং বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারও চীনকে সবুজ সংকেত দিয়েছিল। কিন্তু ভারতের আপত্তির কারণে সেই প্রকল্প আটকে যায়।
চীনের সহায়তায় তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব যখন কার্যকর হতে যাচ্ছিল, তখন ভারতের চাপ এবং কূটনৈতিক প্রভাবের কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বরং হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এ ঘটনায় চীন হতবাক হয় এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়।
হাসিনা সরকারের সেই সিদ্ধান্তের জের ধরে চীন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই ঢাকা ফিরে আসতে হয়। এর পরপরই চীন ও ভারতের মধ্যকার কৌশলগত প্রতিযোগিতা তিস্তা প্রকল্পকে কেন্দ্র করে তীব্র হয়ে ওঠে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এই প্রকল্প নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা নতুন করে জোরদার হয়েছে।
তৌহিদ হোসেনের বেইজিং সফরের সময় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। একইসঙ্গে, মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
চীনের তিস্তা প্রকল্পে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা ভারতের কূটনৈতিক মহলে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তিস্তা প্রকল্পের দায়িত্ব চীনকে দেওয়া হলে ভারতের প্রভাব কমবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ঢাকার বর্তমান কূটনৈতিক অবস্থান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন সরকার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।