কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শাইখ আশহাবুল ইয়ামিনের বাবা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, “আমার সন্তান শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন। সে ছিল মেধাবী শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার বুক। দুনিয়া-আখিরাত উভয় বিচারে আমার সন্তান শহীদ। তাকে গোসল করানো হয়নি। কাফন দেওয়া হয়নি। যে কাপড়ে শহীদ হয়েছে, সে কাপড়েই জানাজার পর দাফন করেছি আমার কলিজার টুকরোকে।”
গত ১৮ জুলাই সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা পয়েন্টে কোটাবিরোধী অহিংস আন্দোলনে থাকা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এ সময় মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ইয়ামিন বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে পুলিশের সাঁজোয়া যানের সামনে রুখে দাঁড়ান। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার বুক। এরপর মুমূর্ষু ইয়ামিনকে পুলিশের সাঁজোয়া যানে তুলে এক পর্যায়ে রাস্তার ওপর ফেলে দেওয়া হয়। এই নৃশংস দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই হত্যাকাণ্ড ব্যাপক প্রচার পায়।

ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন অভিযোগ করেন, “ইয়ামিনকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। তার পরের ঘটনাগুলো ছিল নৃশংস বর্বরতা। ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস অ্যান্ড ট্রাফিক) আবদুল্লাহিল কাফী, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, এবং সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামানের নির্দেশে তাঁকে গুলি করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে তাকে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়।”
ইয়ামিনের মরদেহ দাফনে বাধার মুখে পড়তে হয় তার পরিবারকে। প্রথমে কুষ্টিয়ায় নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফনের চেষ্টা করা হলেও ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সাভারের তালবাগ কবরস্থানেও একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। অবশেষে ব্যাংক টাউন কবরস্থানের সভাপতির প্রচেষ্টায় সেখানে তাকে দাফন করা সম্ভব হয়।

আবেগঘন কণ্ঠে মো. মহিউদ্দিন বলেন, “আমাদের গোটা পরিবারই রাজনীতির বাইরে। ইয়ামিনও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সে ছিল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এবং কোটাবিরোধী। আমরা কোনো রাজনৈতিক চিন্তা করি না।”
ইয়ামিন সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে অসাধারণ ফলাফল করেছিলেন এবং বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের কারণে বুয়েটে ভর্তি হননি তিনি। ইয়ামিনের স্বপ্ন ছিল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে শিক্ষকতা করা। তবে, তার স্বপ্ন আজ চিরতরে হারিয়ে গেছে।