গ্রেপ্তার, ভাঙচুর ও বহিষ্কার—ঘটনার বিস্তারিত
ময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতার কাছে বিদেশি পিস্তল থাকার খবর পেয়ে অভিযান চালায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অভিযান চলাকালে ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করার সময় তার সমর্থকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং আহত হন এক উপপরিদর্শক। সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নগরের বলাশপুর মরাখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ডিবি পুলিশ জানায়, অভিযানে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বুলবুল আহমেদ ওরফে সজীব (৩০)-কে গ্রেপ্তার করা হয়। তল্লাশিতে তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশ জানায়, বুলবুল আহমেদকে গ্রেপ্তারের সময় তার ২০০-২৫০ জন সমর্থক হামলা চালায়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের মাইক্রোবাস আটকে আক্রমণ করে এবং বুলবুলকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের আরেকটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা দা ও লাঠি নিয়ে চড়াও হয়। এই সংঘর্ষে দুটি মাইক্রোবাসে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়। পুলিশের উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঘটনার পর পুলিশ অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধা, গাড়ি ভাঙচুর এবং আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছে। পৃথকভাবে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশিদ বলেন, “অপরাধীর সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। কী কারণে অস্ত্রটি সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা উদ্ঘাটনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল থেকে বুলবুল আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভির আহম্মেদ রবিন জানান, “বুলবুল আহমেদ আমাদের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বহিষ্কার করেছে।”
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে ঘটনার নিন্দা জানালেও, কিছু মানুষ পুলিশের অভিযানের সময় পরিস্থিতি আরও সংযতভাবে মোকাবিলার দাবি করেছেন।
ময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতার গ্রেপ্তার, পুলিশের ওপর হামলা, এবং পরবর্তী বহিষ্কারের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।