বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে জনপ্রিয় অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারকে। জালিয়াতির অভিযোগে সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অভিযোগে বলা হয়, তিনি অনৈতিকভাবে সমিতির প্যাড ব্যবহার করে মনগড়া বিবৃতি প্রদান করেছেন। এই বহিষ্কারের খবর প্রকাশের পরই নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন নিপুণ।
নিপুণ আক্তার পেশায় চিত্রনায়িকা হলেও তার প্রভাবের আসল উৎস ছিলো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ ফজলুল করিম সেলিম। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এটি ওপেন সিক্রেট হিসেবে পরিচিত ছিল। সহকর্মীরা বরাবরই তার রাজনৈতিক মদদ ও প্রভাবের বিষয়ে আড়ালে-আবডালে কথা বললেও মুখ খুলতে সাহস পাননি। বিশেষ করে চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও ডিপজল বারবার ইঙ্গিত করেছেন, নিপুণের পেছনে রয়েছে অদৃশ্য শক্তি।
একাধিক সূত্র দাবি করেছে, নিপুণের ক্ষমতার উৎস ছিল শেখ সেলিমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ফেসবুকে তাদের একাধিক পারিবারিক ছবি পাওয়া গেছে, যেখানে শেখ সেলিমকে নিপুণের মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা গেছে। এমনকি নিপুণের পার্লার ব্যবসাও শেখ সেলিমের অনুদান বলে ধারণা করা হয়।
২০১৬ সালে রাজধানীর বনানীতে নিপুণ “টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা” নামে একটি পার্লার প্রতিষ্ঠা করেন, যা উদ্বোধন করেন শেখ সেলিম। অভিযোগ রয়েছে, এই পার্লার ব্যবসা মূলত তার রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম। এছাড়াও, বিদেশে ভ্রমণ, বিলাসবহুল গাড়ি, এবং মেয়ের বিদেশে পড়াশোনার খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
সূত্রমতে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব খাটিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বিশেষ করে রাজউকের ড্রইং অ্যাপ্রুভালের ক্ষেত্রে তিনি অবৈধভাবে টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আটতলা ভবনের জন্য ২০-৫০ লাখ এবং দশতলার জন্য ৫০ লাখ টাকা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিপুণের প্রাক্তন স্বামী অপু দাবি করেছেন, নিপুণ তাকে ছেড়ে যান শেখ সেলিমের ভরসায়। তার ভাষায়, “নিপুণ মূলত শেখ সেলিমের রক্ষিতা। এই কারণেই আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।”
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে বারবার বিতর্কিত অবস্থানে দেখা গেছে নিপুণকে। ২০১০ সালে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের কাছে হেরে যাওয়ার পরও আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ওই পদে বসেন তিনি। ২০২৫ সালের নির্বাচনে খল অভিনেতা ডিপজলের কাছে হেরে যাওয়ার পরও তিনি প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। ডিপজল তার অর্থনৈতিক বাণিজ্য এবং ব্যবসার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “ওনার পার্লারে গিয়ে দেখুন, সেটা আসলে কী।”