বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বার্তায় বলা হয়, “আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের জন্য কাজ হবে। সেই বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করছি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদ শুরুর জন্য তাঁকে শুভকামনা জানাই।”
শুভেচ্ছা বার্তায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
ড. ইউনূস বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমরা বিশ্বাস করি, এই সহযোগিতা আগামীতে আরও বিস্তৃত হবে। মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে কৌতূহল রয়েছে। বাংলাদেশও এই নীতির আওতায় নতুন সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্যিক চুক্তি এবং মানবাধিকার ইস্যুতে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক লেনদেন ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক দেশ।
ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য আরও বড় বাজার তৈরি হবে। বিশেষ করে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে ড. ইউনূস তাঁর বার্তায় গুরুত্বারোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে বৈশ্বিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে থাকবে।”
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সহযোগী। বিভিন্ন সময়ে মার্কিন সাহায্য এবং বিনিয়োগ বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ড. ইউনূস এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক এবং মানবিক মূল্যবোধের উপরও ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।”
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভাষণে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে আগ্রহী।” তার এই বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শুভেচ্ছা বার্তায় দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের যে আশা ব্যক্ত করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে দুই দেশকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আগামীতে কতটা দৃঢ় এবং ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে উভয় দেশের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর। এই সম্পর্ক শক্তিশালী হলে বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে।