কক্সবাজারের উখিয়ায় এক রোহিঙ্গা শিশুকে মাটির গর্তে পুঁতে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ছয় বছরের শিশু মোহাম্মদ আরাকান তার বাবার কাছে রোহিঙ্গা ভাষায় দ্রুত মুক্তিপণ পরিশোধ করার আকুতি জানাচ্ছে।
ভিডিওতে শিশুটির কথা ছিল, “আব্বা তরাতরি চেষ্টা গর। মরে গাতত ঘলায় ফিল্লে। টিয়া দে। (বাবা দ্রুত চেষ্টা কর। আমাকে গর্তে পুঁতে ফেলেছে। টাকা দাও)।”
গত ৮ জানুয়ারি উখিয়ার থাইংখালী-১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-১৫ ব্লকের আবদুর রহমান ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে আরাকান ক্যাম্পের খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়। দুই দিন ধরে তার সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোর পর, ১০ জানুয়ারি তার মা-বাবা একটি ভিডিও বার্তা পান। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
পরিবার থেকে জানা যায়, অপহরণকারীরা আরাকানের মুক্তির জন্য প্রথমে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। প্রথম দফায় মায়ের কানের দুল বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করে আরও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার পর, ১৪ জানুয়ারি রাতে কুতুপালং এমএসএফ হল্যান্ড হাসপাতালের সামনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আরাকানকে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।
শিশুটির বাবা আবদুর রহমান জানান, “খেলার মাঠে খেলতে গিয়ে আমার ছেলে আর ফেরেনি। দুই দিন ধরে বিভিন্ন ক্যাম্পে খুঁজেছি এবং পুলিশের সহায়তা চেয়েছি। ১০ জানুয়ারি দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকে কল পেয়ে জানতে পারি, আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপণ না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে।”
তিনি আরও জানান, “অপহরণকারীরা দাবিকৃত মুক্তিপণের প্রমাণ হিসেবে আমার ছেলেকে মাটিতে পুঁতে রেখে ভিডিও করে। প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দিয়েও কোনো ফল হয়নি। পরে ধার-দেনা করে আরও টাকা দিয়ে ছেলেকে ফিরে পাই।”
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন বলেন, “শিশুর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯৩ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এসময় অপহরণের সংখ্যা ছিল ৮৬। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ভুক্তভোগী মুক্তিপণ পরিশোধের পরেই মুক্তি পেয়েছেন।
এই ঘটনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিদ্যমান নিরাপত্তা ঘাটতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। প্রশাসনের উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও, অপহরণ এবং মুক্তিপণ দাবির মতো অপরাধ কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয় জনগণ এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছ থেকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। শিশু আরাকানের মুক্তি একটি স্বস্তির খবর হলেও, এর মাধ্যমে ক্যাম্পে নিরাপত্তার অভাবের বাস্তব চিত্র আরও প্রকাশ পেয়েছে।
সমাজের সব স্তরের সহযোগিতা এবং প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যোগ এই ধরনের অপরাধ রোধে অপরিহার্য।