ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্তের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ৮ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসেন তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুমতি দেন। পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামলার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
পিবিআই-এর আবেদনে জানানো হয়, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সময় জিয়াউল আহসান র্যাবের এডিজি (অপারেশন) এবং মশিউর রহমান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি ছিলেন। তদন্তের সঙ্গে তারা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। তাদের শিশু সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ তখন বাসায় উপস্থিত ছিল। ঘটনার পরদিন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
প্রাথমিকভাবে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ এবং পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ এই মামলার তদন্ত চালায়। এরপর তদন্তভার র্যাবের হাতে যায়। কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় পার হলেও মামলার অগ্রগতিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ১১৪ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
২০২3 সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট র্যাবের হাত থেকে তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়, “এবারের ছয় মাস মানে ছয় মাস। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।” পরবর্তী নির্দেশনার জন্য ৬ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে।
র্যাব এই মামলায় আটজন সন্দেহভাজনসহ ২৫ জনের ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। কিন্তু ক্রাইম সিন রিপোর্টে প্রাপ্ত ডিএনএ প্রোফাইল সন্দেহভাজন খুনীদের সঙ্গে মেলেনি। ফলে তদন্তের ধীরগতি নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে।
সাংবাদিক সংগঠনগুলো, যেমন ডিইউজে, বিএফইউজে এবং ডিআরইউ, বারবার সাগর-রুনি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছে।
২০২৪ সালে বাদী মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনিরকে মামলার নতুন আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। শিশির মনির বলেছেন, “আমরা সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উন্মোচনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক বক্তব্যে বলেছেন, “চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে বছরের পর বছর সময় নেওয়া কাম্য নয়। এতে ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয় এবং সাক্ষ্য প্রমাণ হারানোর শঙ্কা বাড়ে।”
সাগর-রুনি হত্যা মামলার সুষ্ঠু সমাধান এখনো অধরা। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও পরিবার, সহকর্মী এবং দেশের মানুষ ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।