পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শকরা (এসআই) চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি এখনও চলমান।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের বিপরীতে উসমানী উদ্যান-সংলগ্ন রাস্তায় এই অনশন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। শীতের রাতেও তারা তাদের দাবিতে অনড়।
অব্যাহতি পাওয়া এসআই মো. আকাশ বলেন, “আমরা সোমবার বিকেল থেকে এখনও অনশনে আছি। শীতের মধ্যে রাত কাটানো খুবই কষ্টকর ছিল। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।”
অন্য একজন এসআই, নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, “আমরা যদি অন্যায় করতাম, তাহলে এত কষ্ট সয়ে দাবি আদায়ে অটল থাকতাম না। সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে আমরা আশা করি সরকার আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবে।”
অব্যাহতি পাওয়া এসআই রবিউল রবি তার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের যেন দেখার কেউ নেই। আমাদের ভাই-বোনেরা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছে। আজ তারা ঢাকার রাস্তায় শীতে অনশন করছে। এরপরও কি আমাদের প্রতি রাষ্ট্রের দয়া হবে না?”
আরেক ক্যাডেট এসআই সুবীর বলেন, “একটা চাকরির জন্য আজ আমরা রাস্তায়। আমরা কী দোষ করেছিলাম, জানি না। আমাদের ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত। দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই অনশন চলবে। আমরা চাই এই সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান হোক।”
এর আগে, রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ৩১০ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একাডেমি থেকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৪০তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ এসআইরা প্রশিক্ষণ চলাকালীন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন।
চিঠিতে বলা হয়, গত ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন চলাকালে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য পূর্বনির্ধারিত নাশতা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা সরবরাহ করা নাশতা না খেয়ে হৈচৈ করেন এবং মাঠে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করেন। তারা অন্যদের সংগঠিত করে কর্তৃপক্ষকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। এরপর প্রশিক্ষণ মাঠ ছেড়ে নিজের খেয়ালমতো ব্যারাকে চলে যান।
অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা দাবি করেছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ মিথ্যা। তারা বলেন, “আমরা কোনো অন্যায় করিনি। আমাদের বৈধ অধিকার পুনর্বহাল করার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের দাবি জানাচ্ছি।”
এই ঘটনা বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনায় একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। অব্যাহতি পাওয়া ক্যাডেট এসআইদের পুনর্বহালের দাবিটি শুধু তাদের ভবিষ্যৎ নয়, বরং পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ ন্যায্যতা ও শৃঙ্খলার ওপরও গুরুত্বারোপ করে।
অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা মনে করেন, তাদের প্রতি অন্যায় হয়েছে এবং তারা সরকারের কাছে একটি সুষ্ঠু সমাধান প্রত্যাশা করছেন। তারা জানান, “আমরা শুধুমাত্র ন্যায়বিচার চাই। আমাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হোক।”
এই ঘটনা পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাহকসেবার উন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে। অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের দাবির প্রতি সরকারের দ্রুত মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে ন্যায্যতা নিশ্চিত হয় এবং এই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আর না ঘটে।