মন্দির ঢাকার দাবির পেছনের প্রকৃত সত্য
সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিল ঘিরে সম্প্রতি একটি বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি মাহফিলের শেষ দিনে ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারীর বয়ানের কারণে নিকটবর্তী গোপাল টিলা শিব মন্দির পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দাবি করে কিছু ছবি ইন্টারনেট ও ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তবে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, এই দাবি সঠিক নয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান অনুসারে, ড. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর বয়ানের কারণে গোপাল টিলা শিব মন্দির ঢেকে দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো, উক্ত মন্দির প্রাঙ্গণে সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কাজ চলছিল। প্রতিমা কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং শিশু-কিশোরদের অযাচিত কৌতূহল এড়াতে মন্দিরটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সাবেক গণমাধ্যমকর্মী হাসান আল মাহমুদের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিগুলো সিলেটের গোপাল টিলা মন্দিরের। মাহমুদ উল্লেখ করেন, ওয়াজ মাহফিলের তিন দিন আগে থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে প্লাস্টিক টাঙ্গানো ছিল। ওয়াজ মাহফিল শেষ হওয়ার পরও প্লাস্টিক সেখানে রয়েছে এবং আরও কয়েকদিন থাকবে।
গোপাল টিলা শিব মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ এই প্রসঙ্গে বলেন, “উল্লেখিত দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। প্রতিমা তৈরির জন্য কারিগর নিজেই প্লাস্টিক টাঙ্গিয়েছেন। এটি কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক চাপের কারণে নয়।”
প্রতিমা তৈরির সময় কুয়াশা প্রতিমার রং ও কাঠামোর ক্ষতি করতে পারে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে কারিগররা প্রাথমিকভাবে প্লাস্টিকের শামিয়ানা স্থাপন করেন। এছাড়া, মন্দিরে আসা শিশু-কিশোরদের অনাকাঙ্ক্ষিত কৌতূহল এড়াতেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ সাধারণ একটি ঘটনা, যা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এই ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের আরও সতর্ক হতে হবে। তথ্য যাচাইকারী সংস্থাগুলোর রিপোর্ট ও মন্দির কর্তৃপক্ষের বক্তব্যই প্রকৃত সত্য তুলে ধরে।
সিলেটের গোপাল টিলা শিব মন্দির ঘিরে প্রচারিত ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তি সঠিকভাবে যাচাই করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মন্দিরটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পেছনে সম্পূর্ণ বাস্তবিক কারণ রয়েছে, যা কোনও ধর্মীয় প্রভাব থেকে উদ্ভূত নয়। এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য রোধে সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল ব্যবহারই একমাত্র পথ।