বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক’র বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির বিরুদ্ধে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘সমন্বয়কদের তদবির-বাণিজ্য : এক রাফির হিসাবেই ৩২ কোটি টাকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন রাফি।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করে রাফি এ বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সেখানে ৩২ কোটি টাকার ব্যাপারে কথা বলা হচ্ছে। যারা আমার ফেসবুকে যুক্ত আছেন, তারা জানেন যে, মাস দেড়েক আগে এই অভিযোগের খুঁটিনাটি আমি বিস্তারিতভাবে জানিয়েছিলাম।”
রাফি আরও বলেন, “আমার বিশ্বাস, এটি একটি প্রোপাগান্ডা। ইতোমধ্যে আমার বিরুদ্ধে করা নিউজটি সরানো হয়েছে। প্রথম নিউজটি পুরোপুরি পড়েছি এবং পরে তারা ক্ষমা চেয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে সেটি আমি এখনও পড়িনি।”
রাফি স্পষ্টতই জানান, “যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলো যদি জিরো পয়েন্ট জিরো জিরো পার্সেন্ট প্রমাণিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের আইনে যা শাস্তি রয়েছে, তা আমি মেনে নিতে প্রস্তুত। এমন কোনো পরিস্থিতি যেন আমার জীবনে না আসে যেখানে মানুষের এক টাকাও অন্যায়ভাবে স্পর্শ করতে হবে। এর চেয়ে আমি মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করি।”
রাফি বলেন, “যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এবং আমাকে বিতর্কিত করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাই।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “জুলাই বিপ্লবীদের বিতর্কিত করার পেছনে যারা কাজ করছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা হোক। এটি শুধু আমার নয়, পুরো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি।”
এর আগে, গত বছরের ২৫ অক্টোবর রাফি তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন। সেই ভিডিওর শিরোনাম ছিল ‘অনেক আগে থেকেই আমার অবস্থান পরিষ্কার। ইনকিলাব, জিন্দাবাদ।’
ওই ভিডিওতে তিনি অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে বিকাশের স্ক্রিনশট পিন করে দেন। এছাড়া প্রতিটি বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানান এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেন।
রাফির বিরুদ্ধে সংবাদটি প্রকাশের পরপরই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সংশ্লিষ্ট নিউজ পোর্টাল। পরবর্তীতে তারা প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় এবং রাফির কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই বিষয়টি রাফি তার ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেছেন।
রাফি তার বক্তব্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যে, তার বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। একইসঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলেন। তিনি জনগণের প্রতিও তার অবস্থান পরিষ্কার রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, “আমরা একটি চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এখানে অনেকেই আমাদের বিভ্রান্ত করতে এবং আমাদের কাজ থামিয়ে দিতে চায়। তবে আমি সবাইকে আহ্বান জানাই সত্য যাচাই করে নেওয়ার এবং গুজব থেকে দূরে থাকার।”
খান তালাত মাহমুদ রাফির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রমাণিত না হলেও, এই ঘটনা দেশের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের প্রতি জনসাধারণের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এটি স্পষ্ট যে, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক তদন্ত এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত করাই এ ধরনের বিতর্ক থামাতে পারে।