গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি: হামাস ও ইসরায়েলের চলমান দ্বন্দ্ব
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্বাধীনতাকামী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতির বিষয়টি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। চলমান সংঘাত ও মানবিক সংকটের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আলোচনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। আল জাজিরার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাস ৩৪ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে আলোচনা এবং তার বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসর গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। এই তিন দেশ উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
হামাসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে উভয় পক্ষের মধ্যে এক সপ্তাহের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
হামাস গাজার নিরাপত্তা এবং মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির জন্য যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার চেয়েছে। তাদের মতে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কেবল তখনই সম্ভব, যখন ইসরায়েল এই শর্তগুলো মেনে নেবে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো বারবার নাকচ করা হয়েছে। তারা দাবি করেছে, হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল। জিম্মিদের মধ্যে ৯৬ জন এখনো জীবিত রয়েছেন এবং ৩৪ জন মারা গেছেন।
হামাসের পক্ষ থেকে জিম্মিদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে, হামাস এখনো মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের অবস্থা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করেনি। এদিকে, ইসরায়েলের ‘হোস্টেজস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ দ্রুত বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিতের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
যদিও যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্ত বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধানে উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত জরুরি।
গাজার অবরুদ্ধ পরিস্থিতি ও চলমান সংঘাত বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকট তৈরি করেছে। শিশু, নারী এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মতো জটিল ইস্যুর সমাধান সহজ নয়। তবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা আশার আলো দেখাচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।