লন্ডনে চিকিৎসা ও আবেগঘন পুনর্মিলনী
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ সাত বছর পর বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে পুনর্মিলনের উদ্দেশ্যে লন্ডন যাচ্ছেন। এ যাত্রা শুধুমাত্র উন্নত চিকিৎসার জন্য নয়, এটি একটি আবেগঘন পারিবারিক পুনর্মিলনও। তারেক রহমান, যিনি বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন, লন্ডনে মায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।
২০১৫ সালে তারেক রহমান তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর সময় মায়ের পাশে থাকতে পারেননি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোকোর আকস্মিক মৃত্যু পরিবারে গভীর শোকের সৃষ্টি করে। সেই থেকে দীর্ঘ সাত বছরের ব্যবধান পেরিয়ে এই পুনর্মিলন খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান উভয়ের জন্যই এক অনন্য আবেগঘন মুহূর্ত।
বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ১০টায় কাতার আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে তাকে সরাসরি একটি উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকছেন সাতজন চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের মধ্যে রয়েছেন:
- ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন
- অধ্যাপক মো. শাহাবুদ্দীন তালুকদার
- অধ্যাপক ফখরুদ্দীন মো. সিদ্দিক
- ডা. মোহাম্মদ আল মামুন
- সৈয়দা শর্মিলা রহমান (কোকোর স্ত্রী)
- চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবিএম আব্দুস সাত্তার
লন্ডনে পৌঁছানোর পর তারেক রহমান, তার স্ত্রী এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। তাদের এই সাক্ষাৎ হবে দীর্ঘ সাত বছর পর। তারেক রহমানের সন্তানরাও বড় হয়ে গেছে এবং তারা দাদীকে সরাসরি দেখতে পারবে, যা পরিবারের জন্য একটি আনন্দঘন মুহূর্ত।
লন্ডনে চিকিৎসা শেষে বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সেখানে মেরিল্যান্ডের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার লিভার এবং অন্যান্য জটিলতার উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার এই যাত্রা শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য নয়, এটি তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবন এবং পারিবারিক দায়িত্বের একটি সমান্তরাল অধ্যায়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালে কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে তিনি কঠোর রাজনৈতিক এবং মানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২০ সালে নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়।
বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছেন। তারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই বিদেশ যাত্রা তার শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি দলের জন্যও একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা শুধুমাত্র একটি চিকিৎসা কার্যক্রম নয়, এটি একটি মায়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবং পারিবারিক বন্ধনের পুনর্জাগরণ। তার এই যাত্রা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে গভীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে।