ঢাকা, ৬ জানুয়ারি: বিডিআর বিদ্রোহ কোনো দাবি আদায়ের আন্দোলন নয়, বরং দেশকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র ছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। সোমবার রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
১৫ বছর আগে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় ঘটে ইতিহাসের এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। দুই দিনে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। ভয়ংকর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেঁচে ফেরেন ৫৫ জন।
সভায় উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করেন। তারা বলেন, “চরম নির্যাতন চালিয়ে আমাদের প্রিয়জনদের হত্যা করা হয়েছিল। গলা টিপে হত্যা, রক্তাক্ত নির্যাতন – সেই বিভীষিকা আজও ভুলতে পারিনি।”
সঠিক বিচার না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তারা। “১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা আশা করি, এবার যেন সত্য উন্মোচিত হয়,” বলেন এক শহীদ সেনা কর্মকর্তার সন্তান।
গত ডিসেম্বর গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি আ ল ম ফজলুর রহমান জানান, “আমরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি। তিন মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করব। প্রমাণের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। প্রয়োজনে আমাদের টিম ভারতে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নেবে।”
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে কমিশন সভাপতি বলেন, “যে বা যারা অভিযোগ করছেন, তারা যদি কোনো প্রমাণ দেন, তাহলে আমরা সেগুলো তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করব।”
শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিডিআর বিদ্রোহকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে দোষীদের বিচারের দাবি জানান।
আ ল ম ফজলুর রহমান সভায় উপস্থিত সবাইকে তদন্ত কমিশনের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “আমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছি। দেশবাসীর কাছে সত্য ঘটনা তুলে ধরাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ বাংলাদেশে আলোড়ন তোলে। বিদ্রোহের নামে এই ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছিল পুরো জাতি। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুতে সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হারিয়েছিল তাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের।