দেশে বেকারত্বের হার ও সংখ্যা উভয়ই বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৪ এর তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজারে। আগের বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার।
জরিপ অনুযায়ী, দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের ৪.০৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবিএস এবার প্রথমবারের মতো ১৯তম আইসিএলএস পদ্ধতি অনুযায়ী এই তথ্য প্রকাশ করেছে, যা বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ অনুসরণ করে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এক বছরে ৩৫ লাখ কমে গেছে। ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ছিল ৭ কোটি ১০ লাখ। কিন্তু ২০২৪ সালের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজারে।
শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, তিনটি প্রধান খাত—কৃষি, শিল্প ও সেবা—এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে। এক বছরে এই খাত থেকে ১৫ লাখ ৭০ হাজার কর্মজীবী কাজ হারিয়েছেন। বর্তমানে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজারে।
শিল্প খাতেও ৭ লাখ ৬০ হাজার কর্মজীবী কাজ হারিয়েছেন। এক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে এই খাতে নিয়োজিত জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজারে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশে বিনিয়োগের অভাবই কর্মসংস্থানের সংকট সৃষ্টির মূল কারণ। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার এবং ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, কর্মসংস্থান কমেছে, এবং বেকারত্ব বেড়েছে।”
গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতাও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “উৎপাদন বাড়লেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কিন্তু নতুন কোনো বিনিয়োগ না হওয়ায় উৎপাদন বাড়ছে না। এতে বেকারত্বের হার আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।”
বিবিএস এ বছরের জরিপে রোটেটিং প্যানেল স্যাম্পলিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে এবং ১৩তম ও ১৯তম আইসিএলএস অনুযায়ী ফলাফল প্রস্তুত করেছে। সংস্থাটির মতে, বেকার হিসেবে সেই ব্যক্তিকে গণ্য করা হয় যিনি গত সাত দিনে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি, তবে কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজেছেন।
অর্থনীতিবিদ ও শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট সমাধান, ব্যাংকের সুদহার কমানো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিলে উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্বের হার কমবে।