ঢাকা, ১ জানুয়ারি ২০২৫: জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে শিক্ষাব্যবস্থায় আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। পুরনো সৃজনশীল শিক্ষাক্রম বাতিল করে পুনরায় চালু করা হয়েছে ২০১২ সালের শিক্ষা কারিকুলাম। নতুন বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত সংশোধিত পাঠ্যবই।
সংশোধিত পাঠ্যবইগুলোতে উঠে এসেছে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দিক। এতে রয়েছে সেই সময়ের গল্প, ছবি, কার্টুন, এবং গ্রাফিতি। পাশাপাশি, গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক অতিকথন এবং বন্দনা বাদ দেওয়া হয়েছে।
নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে বিশেষ অধ্যায় ‘আমাদের নতুন গৌরবগাঁথা’
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাঁথা’ অধ্যায়। এতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এভাবে:
> “৫ আগস্ট ২০২৪, ৩৬শে জুলাই। দেশজুড়ে উত্তাল আন্দোলন। হাজারো মানুষ ঢাকায় এসে গণভবন ঘেরাও করে। কারফিউ উপেক্ষা করে মানুষের ঢল গণভবনে পৌঁছে যায়। পতনের শঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগ করেন।”
এই অধ্যায়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যান্য শ্রেণির বইয়েও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ‘আমাদের জাতির পিতা’ অধ্যায়টি বাদ দিয়ে সংযোজন করা হয়েছে ‘আমাদের চার নেতা’। এতে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী স্থান পেয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে নতুন অধ্যায় ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’। এতে ২০২৪ সালের আন্দোলনে শহীদ হওয়া আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের আত্মত্যাগের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রংপুরের সাঈদের বুকে গুলি চালানোর ঘটনার বর্ণনা এবং ঢাকার মুগ্ধের পানিবন্টন করতে গিয়ে নিহত হওয়ার গল্প পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করবে।
ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠে নতুন সংযোজন ‘কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’। এতে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান পর্যন্ত কার্টুন ও গ্রাফিতির ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘সিঁথি’ নামের একটি কবিতা। এতে জুলাই বিপ্লবের সময়কার আবেগ ও দৃঢ়তার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন,
> “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার মাইলফলক। নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে আমরা এই ঘটনাগুলো পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করেছি। অতিকথন ও একতরফা বন্দনা বাদ দিয়ে ইতিহাসকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।”
নতুন পাঠ্যবই অনলাইনে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।