গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরামর্শে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রথম থেকেই এই আন্দোলনের নেতারা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তবে তিন মাসের মধ্যেই কিছু বিষয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশে বিলম্ব
৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা থাকলেও, তা পরিবর্তন করে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ৩০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে ঘোষণাপত্র তৈরির ঘোষণা আসার পর এই পরিবর্তন করা হয়। সমন্বয়করা তাদের বক্তব্যে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান।
সমন্বয়কদের অসন্তোষ ও হুঁশিয়ারি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করছেন যে, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তারা সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে পারছেন না। ৩১ ডিসেম্বরের সমাবেশ থেকে তারা সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র জারি করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয় নাই, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসে নাই, তাহলে সরকারের কাজ কী?”
দূরত্বের কারণ ও প্রভাব
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে তাদের কিছু ইস্যুতে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্ব ঘোচাতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রদের মতামতকে প্রাধান্য না দিলে সরকার অস্থিরতায় পড়তে পারে।
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্ক
উপদেষ্টা পরিষদে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আপত্তি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ছাত্রদের মতামতকে উপেক্ষা করে এমন নিয়োগ সরকার ও আন্দোলনের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দূরত্ব ও অসন্তোষ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে সমন্বয় ও সরাসরি আলোচনার অভাব এই দূরত্বের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় উভয় পক্ষের মধ্যে সুসংহত যোগাযোগ ও সমন্বয় প্রয়োজন, যাতে দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।