নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান
নেত্রকোনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেছে, যা নিয়ে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোরে এ মিছিলের পর জেলা পুলিশের অভিযানে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শুক্রবার ভোরে নেত্রকোনার তেরী বাজার থেকে শহীদ মিনারের দিকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ শাখার ১৫-২০ জন নেতাকর্মী। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, মিছিলটি নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কৌশিক রায় ও সুচন মিয়া। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—
- চিন্ময় সরকার (২৭), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।
- সন্দীপ সরকার (২৫), সাবেক সহ-ক্রীড়া সম্পাদক।
- সিন্ধ বণিক বিশাল (২৫), জেলা ছাত্রলীগের সদস্য।
- লোকমান হোসেন (২৮)।
- জয় সাহা (২৫), পৌর ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক।
- রাহুল রায় (২৪), পৌর ছাত্রলীগের সদস্য।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, “নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য মিছিল করছিল। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হবে।”
তিনি আরও জানান, “পালিয়ে যাওয়া অন্যদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আটককৃতদের শনিবার সকালে আদালতে হাজির করা হবে।”
নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিল। তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে আবারও সংঘবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষত, নেত্রকোনার মতো স্থানে যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশাসন অত্যন্ত সক্রিয়।
স্থানীয় জনগণ পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে যাতে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো আবারও সংগঠিত হতে না পারে। এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “শহরের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছিল। পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে বড় কিছু ঘটে যেতে পারত।”
ছাত্রলীগ একসময় বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন ছিল। তবে বিভিন্ন অনিয়ম, সহিংসতা, এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নিষেধাজ্ঞার পরও এর নেতাকর্মীরা গোপনে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সরকার এবং প্রশাসন স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম দমনে তারা কঠোর অবস্থান নেবে। জনগণের সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ।
নেত্রকোনার সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করে যে, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর পুনরুত্থান রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। পুলিশ এবং প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে।