আবহাওয়ার পূর্বাভাস: শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা বাড়ছে
বছরের শুরুতেই হাড় কাঁপানো শীত দেশজুড়ে প্রভাব ফেলেছে। রাজধানীসহ সারা দেশের জনজীবন শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই ঠাণ্ডা আবহাওয়া আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তীব্র থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং দেশের অন্যান্য অংশে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
শীতের প্রকোপে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন শ্রমজীবী মানুষ। দিনমজুর দেলোয়ার হোসেন, যিনি বয়সের কোটা ৭৬ পেরিয়ে গেলেও জীবিকার তাগিদে রাস্তার ধারে চা বিক্রি করেন। কনকনে হিমেল হাওয়া আর শীত তাকে কাবু করতে পারে না। গরম কাপড়ের অভাবে অতিরিক্ত শার্ট পরে, কখনোবা গামছা মুড়িয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রমজীবীদের জন্য শীত মানে শুয়ে-বসে থাকা নয়। প্রতিদিন কাজের জন্য পথে নামতে হয়, পেটের তাগিদে। গরম কাপড় না থাকলে শীত মোকাবিলার জন্য তাদের অভিনব পন্থা অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু এই কঠিন বাস্তবতায় তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
নাগরিক জীবনে শীত কখনো আয়েশের উপলক্ষ তৈরি করে। শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাওয়া প্রকৃতির সঙ্গে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, পিঠা-পুলি খাওয়া, কিংবা ঠাণ্ডা উপভোগ করা অনেকের জন্য আনন্দদায়ক। কিন্তু এই আয়েশী চিত্রের বিপরীতে রয়েছে অসংখ্য মানুষের দুর্ভোগ।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জানুয়ারি মাসকে বছরের শীতলতম মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশা, শীতল হাওয়া, এবং রাতের তাপমাত্রার নিম্নগতি লক্ষ করা যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই শৈত্যপ্রবাহের আভাস ছিল। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তীব্র থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, অন্যান্য অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা বিদ্যমান। এই পরিস্থিতি আরও তিন দিন স্থায়ী হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
শীতজনিত রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বয়স্ক এবং শিশুরা এই সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। পর্যাপ্ত গরম কাপড়, পুষ্টিকর খাবার, এবং শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখা জরুরি।
শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এই উদ্যোগগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাই সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে আরও ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
বছরের শুরুতেই হাড় কাঁপানো শীত দেশের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী এবং নিম্নআয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শীত আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতন থাকা এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।