আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আলেম-ওলামাদের ওপর নিপীড়ন ও দমনপীড়নের এক কালো অধ্যায়ের শিকার হয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। রাজপথে সরব থাকায় তিনি সরকারের বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। বিনা অপরাধে তিন বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, যার মধ্যে ৪১ দিন রিমান্ডে থেকে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
রিমান্ডে ভয়াবহ নির্যাতন
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। ৪১ দিনের রিমান্ড চলাকালে তাকে চোখ বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমনকি তার চুলের ডিএনএ নিয়ে তা ভুয়া মামলার আলামত হিসেবে ব্যবহারের ষড়যন্ত্র করা হয়। আদালতে তাকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো হাজির করা হয়, যা তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার পরিকল্পনার অংশ ছিল।
চরিত্রহননের অপচেষ্টা
মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সরকারের অন্যতম কৌশল ছিল তার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ ও চরিত্রহননের চেষ্টা। সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে অবরুদ্ধ করার ঘটনাটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। এ ঘটনায় তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হলেও পরবর্তীতে আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান।
ইসলামপন্থি আন্দোলনের শীর্ষ কণ্ঠ
মাওলানা মামুনুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রতিবাদী কণ্ঠ। ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনীতির মঞ্চে তার সরব উপস্থিতি তাকে ইসলামপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। তবে এই প্রতিবাদী ভূমিকাই তাকে সরকারের শত্রুতে পরিণত করে।
শাপলা চত্বরের রক্তাক্ত অধ্যায়
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ঘটে যাওয়া বর্বর হত্যাযজ্ঞ আলেম-ওলামাদের ওপর দমনপীড়নের চরম উদাহরণ। শাহবাগ আন্দোলনের বিপরীতে ইসলামপন্থি শক্তির প্রতিরোধের অংশ হিসেবে মাঠে নামার পর হেফাজতকে নির্মমভাবে দমন করা হয়। মামুনুল হক মনে করেন, এই ঘটনা ইসলামের প্রতি আওয়ামী লীগের বিরূপ মনোভাবকে উন্মোচন করেছে এবং ইসলামপ্রেমীদের মনে তাদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা ও বিদেশি প্রভাব
মামুনুল হকের দাবি, তাকে নিঃশেষ করার পরিকল্পনায় বিদেশি প্রভাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সরাসরি ভূমিকা ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তাকে জনবিচ্ছিন্ন ও চরিত্রহননের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হয়। এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিল প্রতিবাদী আলেমদের দমন এবং ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্ধ করা।
আলেম সমাজের প্রতি নিপীড়ন
মামুনুল হক বলেন, আওয়ামী শাসনের সময় আলেম-ওলামা এবং ইসলামের ধারক-বাহকদের জন্য এক ভয়াবহ অধ্যায় ছিল। অনেকেই বিভিন্নভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার নিজের ওপর চালানো নিপীড়নের মাত্রা ছিল ভিন্ন ও অমানবিক।
আওয়ামী শাসনের সময় আলেম-ওলামাদের ওপর দমনপীড়নের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে। মাওলানা মামুনুল হকের মতো জনপ্রিয় আলেমের ওপর নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র কেবল ব্যক্তি আক্রমণ নয়, বরং ইসলামী আন্দোলন ও ধর্মীয় চেতনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের প্রমাণ।