কক্সবাজারের পেকুয়ায় শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিশিষ্ট ইসলামি বক্তা ও গবেষক ড. মিজানুর রহমান আজহারী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। পেকুয়ার বৃহত্তর সাবেক গুলদি তাফসীর ময়দানে অনুষ্ঠিত এই মাহফিলে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি প্রধান মুফাসসির হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যে উঠে আসে পবিত্র কোরআনের শিক্ষাসহ সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলির প্রতিক্রিয়া।
আজহারী বলেন, “নতুন বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রোল মডেল তৈরি করেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবর্তে ধৈর্য ও সম্প্রীতির নজির দেখিয়েছে। যেমন চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের পর মুসলমানরা মন্দির পাহারা দিয়েছে।” তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতের গুজব ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধুসুলভ নয়, বরং প্রভুত্বমূলক আচরণ।”
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকার একটি জরিপের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। অন্যদিকে ভারত গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।”
জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে আজহারী আরও বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি ঐক্যের নজির তৈরি করেছেন। এখন আমাদেরও একতাবদ্ধ হতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক পরাশক্তি আমাদের দুর্বল না ভাবতে পারে। অন্যথায় তারা ট্রানজিট বা সেন্টমার্টিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবি করতে পারে।”
মাহফিলটি সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ১১টায় শেষ হয়। ড. আজহারীর আগমনের খবর পেয়ে ভোর থেকেই মানুষের ঢল নামে। তিনি বিকেলে বসুন্ধরা মালিকানাধীন একটি হেলিকপ্টারে করে তাফসীর ময়দানে আসেন। আয়োজক কমিটি ও প্রশাসন মাহফিলস্থলে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
পেকুয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ামত উল্লাহ নিজামী বলেন, “আজহারী হুজুরের বয়ান শুনতে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সমবেত হয়েছেন। এত মানুষের ভিড়ে মাহফিল এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার জুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হয়।”
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, “আজহারী হুজুরের বক্তব্য শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতি ছিল। যৌথ বাহিনীর নিরাপত্তার কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
এই মাহফিলটি মরহুম মাওলানা শহিদ উল্লাহ স্মৃতি সংসদ ও সমাজ উন্নয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়।