ঢাকা: বিজয় দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরেছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও ঐতিহাসিক সত্যগুলো উপস্থাপন করা হয়।
‘ইতিহাসের তথ্য’ শিরোনামের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, দীর্ঘ সংগ্রাম এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। প্রখ্যাত কূটনীতিক ও ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব জেএন দীক্ষিত তার বই ‘লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড: ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশন্স’-এ উল্লেখ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকা উপেক্ষা করার কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল এমএজি ওসমানিকে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হওয়া ছিল ভারতীয় সামরিক হাইকমান্ডের বড় একটি কূটনৈতিক ভুল। আনুষ্ঠানিকভাবে তার অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে হেলিকপ্টার বিভ্রাটের কথা বলা হলেও, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “আমরা আমাদের গৌরবময় বিজয় উদযাপনের সময় সত্যকে উদযাপন করি। ১৯৭১ সালের বিজয় ছিল বাংলাদেশের জনগণের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও সাহসের ফসল। এটি কোনো পক্ষের একক অর্জন নয়।”
গত সোমবার নরেন্দ্র মোদি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক এবং এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে লেখেন, “আজ, বিজয় দিবসে, ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক বিজয়ে ভারতের সাহসী সেনাদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। তাদের ত্যাগ আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং গৌরব এনে দিয়েছে।”
এই পোস্টে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। মোদির পোস্টে ১৯৭১ সালের বিজয়কে কেবল ভারতের ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মহল থেকে নরেন্দ্র মোদির এ ধরনের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং এতে বাংলাদেশের অবদানের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে প্রশংসা করা হচ্ছে।