বিএনপির যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখী লংমার্চ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে এসে শেষ হয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে প্রভুত্ব ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বন্ধুত্বের বার্তা দেওয়া হয় এই কর্মসূচি থেকে। পাশাপাশি ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সব ধরনের ষড়যন্ত্র বন্ধের কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
সকাল ৯টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে লংমার্চ শুরু হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত বক্তব্য ও প্রতিবাদী স্লোগানের মাধ্যমে গাড়ি বহর আখাউড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। লংমার্চে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছানোর আগেই আশপাশের অন্তত ৮-১০টি জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা সীমান্ত এলাকায় জড়ো হন। দুপুরে আখাউড়া বন্দর এলাকায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।
আখাউড়ার সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এস জিলানীর সভাপতিত্বে ও যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্নার প্রধান অতিথিত্বে অনুষ্ঠিত হয় সভাটি। বক্তারা ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান।
যুবদল সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, “ভারত আমাদের প্রতিবেশী হলেও কখনো প্রকৃত বন্ধু হতে পারেনি। তিস্তার পানি না দিলেও তারা ফেনী নদী থেকে পানি নিয়ে যায়। আমরা জামদানি আর ইলিশ পাঠাই, আর তারা ফেলানির লাশ দেয়। বন্ধুত্বের জায়গায় প্রভুত্বের আচরণ আমাদের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “ভারতের পতাকা পোড়ানোর সময় সেখানে পুলিশ নির্বিকার ছিল। এটি একটি অপমানজনক ঘটনা। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে আমরা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাব। বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।”
লংমার্চকে ঘিরে সীমান্ত এলাকায় ছিল সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আখাউড়া কাস্টমস এলাকা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের যাতায়াত সীমিত করে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বন্দর এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেয়। লংমার্চ ও সমাবেশের কারণে সীমান্ত অঞ্চলে জনসাধারণের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
বক্তারা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইলেও বাংলাদেশে তাদের হস্তক্ষেপ এবং প্রভুত্বমূলক আচরণের কঠোর সমালোচনা করেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে ভারত আমাদের শোষণ করে আসছে। আমরা চাই একটি ন্যায্য ও সম্মানজনক সম্পর্ক। কিন্তু ভারতের আচরণ আমাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।”
যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনচেতা। আমাদের নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কারো প্রভুত্ব মেনে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, কিন্তু বন্ধুত্বের শর্ত হল সমান মর্যাদা।”
লংমার্চের মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্প্রতি ভারতের আগরতলা সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা, মিডিয়ায় অপপ্রচার, এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানানো। এই প্রসঙ্গে বক্তারা ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং মর্যাদা নিয়ে কোনো আপস হবে না।
লংমার্চের শেষ পর্বে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দেশপ্রেম এবং ঐক্যের বার্তা তুলে ধরে। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে স্থান ত্যাগ করেন।
এই লংমার্চের মাধ্যমে বিএনপি ভারতের প্রতি একটি দ্ব্যর্থহীন বার্তা দিয়েছে—বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করলেও প্রভুত্ব এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
বিএনপির এই লংমার্চ কেবল একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নয়; এটি ছিল জনগণের অধিকার রক্ষায় একটি শক্তিশালী বার্তা। সমাবেশে উপস্থিত নেতারা সবাই একমত হন যে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়, তবে তা হবে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে।