ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর: চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের বন্যা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স (সাবেক টুইটার) এবং গণমাধ্যমগুলো এই বিভ্রান্তিকর প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম রিউমর স্ক্যানারের তথ্যমতে, ৫ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এক্সে অন্তত ৫০টি অ্যাকাউন্ট সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই পোস্টগুলো এক কোটি ৫৪ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। ধারণা করা হয়, ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম ও ব্যক্তির মাধ্যমে এসব অপতথ্য ১০ থেকে ১২ গুণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে।
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভুয়া তথ্য ছড়ানো অ্যাকাউন্টধারীদের ৭২ শতাংশ ভারতীয়। এদের মধ্যে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি পর্যন্ত রয়েছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া এবং বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনও এসব প্রচারণায় অংশ নেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। আগস্টে তারা দাবি করে যে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার এই দাবিকে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ করেছে। এমনকি নভেম্বরেও বাংলাদেশে অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি জাহাজ আসার মতো ভুয়া তথ্য প্রচারিত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ঘটনাগুলোকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হলেও এসব ঘটনাকে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।
রিউমর স্ক্যানারের তথ্য মতে, আগস্টে ৫৯টি, সেপ্টেম্বরে ৪টি, অক্টোবরে ৭টি এবং নভেম্বরে ৩১টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দশ দিনেই ১৯টি অপতথ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, আগস্ট পরবর্তী সময়ে এক্সে বাংলাদেশবিষয়ক অপতথ্যগুলো ২০ কোটিরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে। এটি দুই দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি স্বরূপ।