ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশ কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনে ভারতীয়দের ভিসা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই দেশের ইতিহাসে এই প্রথম এমন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করল ঢাকা। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি, তবে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) একটি গোপন দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। শুক্রবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন।
এর আগে, ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর সেখানকার সব কার্যক্রম স্থগিত করেছিল বাংলাদেশ সরকার। ত্রিপুরার দূতাবাসে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়াও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দিল্লি ও আসামে কার্যক্রম সচল, তবে নির্দেশনা আসতে পারে
তবে দিল্লি বা আসামের মিশনের জন্য এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা ও ত্রিপুরার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দিল্লি ও আসামের ক্ষেত্রেও একই ধরনের নির্দেশনা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ত্রিপুরার সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ এবং কলকাতার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার সিকদার মো. আশরাফুল রহমানকে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তারা ঢাকায় পৌঁছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন।
গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) ত্রিপুরার আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ শক্ত প্রতিক্রিয়া জানায়। একদিন পর ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা।
ভারত সরকার এই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে এবং হামলায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি, তিনজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমেই হিমশীতল হয়ে উঠেছে। সংখ্যালঘু ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও বাড়ছে।
ভারতের ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। তার মুক্তির দাবিতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা কোনো ধরনের আপস করবে না। কলকাতা ও ত্রিপুরার দূতাবাস কার্যক্রমে সাময়িক বিধিনিষেধ সেই কঠোর অবস্থানেরই অংশ।
এই পদক্ষেপ ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। কূটনৈতিক অস্থিরতা দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।