দেশে চাল ও গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ এবং আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে বাজারে চালের দাম বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে মজুত ছিল ১১ লাখ ৬৭ হাজার টন খাদ্যশস্য; কিন্তু ৩ ডিসেম্বর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯০ হাজার টনে। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে মজুত কমেছে ৭৭ হাজার টন, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টনের বেশি খাদ্যশস্যের মজুত হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে মজুতের মধ্যে চাল রয়েছে ৬.৬৯ লাখ টন, গম ৪.২০ লাখ টন এবং ধান মাত্র ১ হাজার টন। চার মাস আগেও সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল প্রায় ১৮ লাখ টন, যা বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ কমে গেছে।
চলতি আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান, চাল ও গম সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও ১৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টন, যা দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৭১৪ টন। এই ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে গড়ে ৫ লাখ ৫২ হাজার টন খাদ্য আমদানি প্রয়োজন হলেও চলতি অর্থবছরে আমদানির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬৬.২৮ লাখ টন খাদ্য আমদানি হয়েছে, যার পুরোটাই গম; চাল আমদানির হার খুবই কম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করতে সারা বছর চালের মোট উৎপাদনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ সরকারকে ক্রয়ের মাধ্যমে মজুত করতে হবে। সে হিসাবে সরকারি মজুত হওয়া উচিত ৪০ লাখ টনের বেশি। প্রতি মাসে ২৫ লাখ টন চালের চাহিদা বিবেচনায় কমপক্ষে ১৫ দিনের মজুত থাকা প্রয়োজন। কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “বর্তমানে সরকারি মজুত যে পরিমাণে রয়েছে, তা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। সরকারের উচিত দ্রুত আমন সংগ্রহের গতি বাড়ানো এবং কমপক্ষে ১৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করে মজুত করা।”
খাদ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, “আমন মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ধীরগতি এবং আমদানি কমায় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে বাজারে চালের দাম বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।