ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার দেশের শাসন কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে গেছে। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থায় সর্বাত্মক সংস্কার প্রয়োজন।”
সম্প্রতি নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হলেও এটি সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হয়।
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই নির্বাচনি ব্যবস্থা, সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য একাধিক কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের সুপারিশ জানুয়ারির মধ্যে হাতে পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে। তবে সংস্কার বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এই সংস্কার বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন, কেননা আমরা একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ নির্মাণ।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় নির্ভর করছে সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির ওপর। ফলাফল অনুযায়ী আমরা সময় নির্ধারণ করব।”
প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে স্পষ্টভাবে জানান। তিনি বলেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই। আমার কাজ হচ্ছে শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা।”
ড. ইউনূস বলেন, “হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। টানা তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন আয়োজন করে হাসিনা নিজেকে ফ্যাসিবাদী শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এ বছরের আগস্টে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতন ঘটে। শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। রায় ঘোষণার পর তাকে ফেরত আনতে ভারতকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হবে।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের কাঁধে এই সংকট চিরকাল বহন করা সম্ভব নয়। আমরা মিয়ানমারে জাতিসংঘ-শাসিত একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি, যাতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশেই আশ্রয় নিতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে পারবে।”
ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের সামনে একটি সুবিশাল দায়িত্ব। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে হবে। আমাদের কাজ হবে সততা, ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের মাধ্যমে দেশকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়া।”