ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি, শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এছাড়া, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।
ড. ইউনূস বলেন, “তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক। নিজের দায়িত্ব ভুলে যেও না। রাষ্ট্রের সঠিক পথ নির্ধারণে তোমাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তোমাদের দাবি আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।”
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে দ্রব্যমূল্য মুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হবে। রমজানেও যাতে কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টি না হয়, সেদিকে নজর রাখব।”
স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার বিষয়ে ড. ইউনূস জানান, একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, যারা এই খাতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে। “আমরা চাই ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের কাছে ছেড়ে দিতে, তবে দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে হবে,” বলেন তিনি।
জুলাইয়ের শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “তাদের অবদান আমরা ভুলব না। তাদের যথাযথ সম্মান ও খেতাব নিশ্চিত করা হবে।”
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। দক্ষতা বাড়ানোর পরিবর্তে বেকারত্ব তৈরি হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে টেকসই সংস্কার প্রয়োজন, যা তরুণদের উদ্যোক্তা ও দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলবে।”
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন প্রসঙ্গে তিনি জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বেড়ে ৫২ শতাংশে পৌঁছেছে। “শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেব না। পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করব,” বলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে, সরকারের সঠিক কাজগুলো জনগণের কাছে না পৌঁছানো উদ্বেগজনক।”
শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে সংস্কারকাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারা জানান, “এটি গণমানুষের সরকার, যা দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে।”
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছ। দেশের মানুষ তোমাদের ওপর ভরসা করে। তোমরাই দেশের পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি। আরেক বিজয় তোমাদেরই আনতে হবে।”