নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আধিপত্য ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। তবে সরকারের পতনের পর তার আত্মগোপনে যাওয়ার ফলে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আড়াইহাজারে চাঁদাবাজি, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। ফকির ফ্যাশন লিমিটেডের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ অভিযোগ করেন, চাঁদা না দেওয়ায় আজাদের অনুসারীরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত করছে।
২৩ আগস্ট জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালকের কাছে ফকির ফ্যাশনের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেখানে আজাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বাজার দখল, লুটপাট এবং এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আজাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের মধ্যে বিএনপির আরেক নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন জনগণের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। সুমনের বিরুদ্ধে আজাদের মতো কোনো গুরুতর অভিযোগ না থাকায় তিনি আড়াইহাজারে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। এলাকায় মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে তিনি জনমত নিজের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন।
আজাদের অনুসারীরা দলীয় রাজনীতির চেয়ে ভাইয়ের রাজনীতিতে বেশি মনোযোগী হওয়ায় আড়াইহাজারে দলের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে। সুমনের অনুসারীদের সঙ্গে আজাদের অনুসারীরা একাধিকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আড়াইহাজারে শক্ত অবস্থান রয়েছে আতাউর রহমান খান আঙ্গুরের পরিবারের। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় বিভাজনের কারণে এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়। বর্তমানে মাহমুদুর রহমান সুমন আড়াইহাজারে তার বাবার হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন।
নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং মাহমুদুর রহমান সুমনের বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তার কারণে আড়াইহাজারে আগামী নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উত্তপ্ত হতে পারে। পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়, তা সময়ই বলে দেবে।