জুলাই বিপ্লবের গণহত্যার বিচারের দাবিতে এবং জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালিত হবে। আমরা সব স্তরের নেতাকর্মী এবং দেশের ছাত্রসমাজকে এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ছাত্রশিবিরের দাবির মূল প্রেক্ষাপট হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত জুলাই গণহত্যা। তাদের মতে, ওই সময় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার এখনো হয়নি। তারা দাবি করছে, এই গণহত্যার দায়ীদের চিহ্নিত করা এবং বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার দাবি করে আসছে। এবারের সংহতি সপ্তাহে কর্মসূচির মাধ্যমে তারা নতুন উদ্যমে এই দাবি তুলে ধরছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার ভিত্তিতে, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও মিছিল আয়োজন করা হবে। এতে দলটির সব স্তরের জনশক্তি অংশ নেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই কর্মসূচি পালিত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতাও প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “জাতীয়ভাবে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা গণহত্যার মতো নৃশংস অপরাধগুলোর বিচার বিলম্বিত করছে। আমরা আশা করি, ছাত্রসমাজের জাগরণের মাধ্যমে এই অন্যায়ের অবসান হবে।”
তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই আমাদের এই উদ্যোগ একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করার প্রয়াস।”
ছাত্রশিবিরের এই কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রয়াস।
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক রয়েছে। তারা জানিয়েছে, যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রশিবিরের এই কর্মসূচি দেশের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, গণহত্যার বিচারের দাবি একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার ইস্যু হওয়ায় এটি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
বিক্ষোভ ও সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠনটি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে সবার দৃষ্টি এখন শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই কর্মসূচি পালনের দিকে।