জাতিসংঘ ঘোষিত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি দিবসে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের বার্তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার, স্বাধীনতা এবং মর্যাদার সংগ্রামে পাশে থাকবে।
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে জেরুসালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এটি কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি জরুরি প্রয়োজন।
“বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ,” তিনি বলেন। এই সমর্থন শুধু রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়পরায়ণতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
গাজায় চলমান সংঘাতের ফলে নিরীহ মানুষ, বিশেষত নারী ও শিশুদের ওপর যে নৃশংসতা চলছে, তার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গাজার পরিস্থিতি মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। এই সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে গাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকার পুনঃস্থাপন করা জরুরি। এটি না হলে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ কেবল বাড়তেই থাকবে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) সম্প্রতি তাদের পরামর্শমূলক মতামতে ইসরায়েলের দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষিতে ড. ইউনূস বলেন, “ইসরায়েলের দখলদারিত্ব আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দখলদারিত্বের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।”
তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং নৃশংসতার বিচার নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। তার মতে, এই অপরাধের বিচার না হলে এটি শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি দুঃখজনক উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি অটল সমর্থন জানিয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিলিস্তিনের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন এবং সেই থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিলিস্তিনের অধিকার নিয়ে কথা বলেছে।
বাংলাদেশ শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে নয়, মানবিকভাবেও ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। গাজার সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থ, ওষুধ এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ড. ইউনূস এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা শুধু কথা বলছি না, আমরা কাজ করছি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকব।”
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণের উপর যে নৃশংসতা চলছে, তা বন্ধ করার দায়িত্ব কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের নয়। এটি সারা বিশ্বের মানবতাবাদী সম্প্রদায়ের দায়িত্ব।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষা এবং তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায়ের বিচার নিশ্চিত করা।”
ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামকে নিজেদের সংগ্রাম বলে মনে করে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সংগঠন ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনের মধ্যকার অটুট সম্পর্কের আরেকটি উদাহরণ। তিনি যেমন ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবিক সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশের এই সমর্থন শুধু ঐতিহাসিক নয়, মানবিকতার জয়গান হিসেবেও বিবেচিত হবে।