জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) কালাই উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ চত্বরে “ছাত্র কৃষক কর্ণার” ব্যানারে ন্যায্যমূল্যের বাজার চালু হয়। এতে বাজারমূল্যের তুলনায় কম দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায়, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আল আমিন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে ৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি কার্যক্রমের সূচনা করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ন্যায্যমূল্যে আলু কেনার সুযোগ পেয়ে তারা বেশ সন্তুষ্ট। কালাই পৌরসভা এলাকার শফিকুল, আশিক, নুশরাফ এবং রানার মতো ক্রেতারা জানান, বাজারে যেখানে আলুর দাম ৭০ টাকা কেজি, সেখানে ৫০ টাকায় আলু কিনতে পারা তাদের জন্য বড় স্বস্তির বিষয়। শফিকুল বলেন, “বর্তমান বাজারে সবকিছুর দামই বাড়তি। এমন অবস্থায় প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।”
অনেক ক্রেতা প্রশাসনের পাশাপাশি উদ্যোগে জড়িত ছাত্র প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং এই ধরনের ন্যায্যমূল্যের বাজারে অন্যান্য পণ্য, বিশেষত পেঁয়াজ, তেল, চাল, এবং অন্যান্য সবজি যুক্ত করার দাবি করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ছাত্র প্রতিনিধি তানিম সরকার বলেন, “আজ আমরা মোট ৫৬ জন মানুষের মাঝে জনপ্রতি ৫ কেজি করে আলু বিক্রি করেছি। আগামীতে এই বাজারে আলুর পাশাপাশি অন্যান্য সবজি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আশা করি, এর ফলে ক্রেতারা আরও সুবিধা পাবেন এবং বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
মেফতাহুর রহমান এবং মাহিরের মতো ছাত্র প্রতিনিধিরা জানান, তাদের এই উদ্যোগে এলাকার মানুষের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে কার্যক্রম পরিচালনার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, “বর্তমানে বাজারে আলুর দাম ৭০ টাকা কেজি হলেও এই বাজারে তা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি আলু কিনতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি, এর ফলে স্থানীয় বাজারে আলুর দামে ভারসাম্য আসবে এবং সাধারণ ক্রেতারা উপকৃত হবেন।”
ইউএনও শামিমা আক্তার জাহান জানান, “জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় কালাই উপজেলায় ন্যায্যমূল্যের বাজার চালু করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বজায় রাখা এবং সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে সৃষ্ট অসামঞ্জস্যতা দূর করা। আমরা আশা করি, এই কার্যক্রম ক্রমাগত চালিয়ে গেলে বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।”
প্রশাসন এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের যৌথ উদ্যোগে এই ন্যায্যমূল্যের বাজার শুধু আলু নয়, অন্যান্য পণ্যও যুক্ত করবে বলে জানা গেছে। তানিম সরকার বলেন, “প্রথম ধাপে আমরা শুধুমাত্র আলু দিয়ে শুরু করেছি। তবে ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে আমরা সবজি, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা করছি।”
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, “আমরা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যাতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে সেগুলো ক্রেতাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করতে পারি। এতে একদিকে কৃষকরা সঠিক মূল্য পাবেন, অন্যদিকে ক্রেতারাও কম দামে পণ্য কিনতে পারবেন।”
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই ধরনের উদ্যোগ বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে সহায়ক হবে। বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের দাম কমে আসবে। বিশেষজ্ঞরাও বলেন, সরকারি হস্তক্ষেপ এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।
কালাই উপজেলার ন্যায্যমূল্যের এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই সবার নজর কেড়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশংসার পাশাপাশি অন্যান্য উপজেলায় এই ধরনের কার্যক্রম শুরুর আহ্বান উঠেছে।
কালাই উপজেলায় ৫০ টাকায় আলু বিক্রির মাধ্যমে শুরু হওয়া এই ন্যায্যমূল্যের বাজার সাধারণ মানুষের জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত হলে, স্থানীয় বাজার এবং কৃষকদের উপর এর দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।