ঘাতক রিকশাচালকের গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা ঘাতক রিকশাচালককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবিতে মশাল মিছিল করেন।
শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে। পরে শহীদ মিনারের পাদদেশে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দেন, দাবি পূরণ না হলে আগামী রোববার (২৪ নভেম্বর) থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।
সন্ধ্যা সাতটায় শিক্ষার্থীদের এ প্রতিবাদ মিছিলটি শুরু হয়। বটতলা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি ফিরে আসে শহীদ মিনারে। সমাবেশে বক্তারা আফসানার মৃত্যুতে দায়ী রিকশাচালককে গ্রেফতারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, “একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় আমরা আমাদের এক সহপাঠীকে হারিয়েছি। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার ফল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দায়ী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা না হলে, আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।”
গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আফসানা করিম রাচি গুরুতর আহত হন ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায়। তাকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সাভার এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের আবেগ ও প্রতিবাদের কথা বিবেচনা করে বুধবার (২০ নভেম্বর) শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশার বেপরোয়া চলাচল দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আফসানার মৃত্যু সেই অবহেলারই একটি উদাহরণ বলে তারা দাবি করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, “ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব। আমাদের দাবি হলো, দায়ী ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।”
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক রিকশাচালককে গ্রেফতার করা না হয়, তবে তারা রোববার থেকে কঠোর কর্মসূচি শুরু করবেন। তবে সেই কর্মসূচি কী হবে, তা সমাবেশে খোলাসা করেননি তারা।
আফসানার অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধব শোকাহত। তার এক বন্ধু বলেন, “আফসানা সব সময় হাসিখুশি ছিল। এমন একটি দুর্ঘটনায় তাকে হারাবো, তা কখনো ভাবিনি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক নিরাপত্তার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া এবং বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।