শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সভায় সংস্কার কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক পথযাত্রা ভিন্ন হতে পারে, তবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকায় এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে, শিক্ষাখাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা সমস্যাগুলোর সমাধানে একটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবে।”
তিনি আরও বলেন, “এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করে একটি কার্যকর সংসদ গঠন করতে হবে, যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের মূল চাবিকাঠি হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য তার বক্তব্যে শিক্ষা খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার। টিউশন ফি, শিক্ষা মানের তারতম্য এবং প্রশাসনিক জটিলতা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সংস্কার কমিশন গঠন করে আমরা একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করব, যেখানে বেসরকারি ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্য দূর করা হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করাই হবে আমাদের লক্ষ্য।”
এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জনগণকে শক্তি ফিরিয়ে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
তিনি বলেন, “যে সংসদ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে, তা গঠন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
সভায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা রোধ করতে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি বলেন, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সব শ্রেণির মানুষের স্বার্থরক্ষায় একটি সুষ্ঠু এবং সুষম সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
আলোচনা সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। তারা বিশ্বাস করেন, শিক্ষা খাতের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অবহেলিত বোধ করি। যদি সত্যিই একটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়, তাহলে আমাদের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও আমাদের লক্ষ্য এক হওয়া উচিত—একটি গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন। এজন্য সব দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক বিভেদ দূর করতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”