বাংলাদেশে আমন সংগ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। আগামী রবিবার (১৭ই নভেম্বর) থেকে এই সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এ বছর ধান সংগ্রহের জন্য কেজি প্রতি ৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য ভবনে বৃহস্পতিবার (১৪ই নভেম্বর) অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “বর্তমান সময়ে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো আমন ধান সংগ্রহ। দেশের উত্তরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, তাই আমরা আশাবাদী যে এই সংগ্রহ অভিযান সফল হবে।” তিনি আরও জানান, “কৃষক যেন ন্যায্য দাম পায়, সেই লক্ষ্যে আমন ধান সংগ্রহের জন্য কেজি প্রতি ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। চালের মূল্যও সমন্বয় করা হয়েছে।”
এ বছর সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, মোট সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান, এবং এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে, গত বছর চালের সংগ্রহমূল্য ছিল ৪৪ টাকা, যা এবার ৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, আতপ চালের মূল্য ৪২ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪৬ টাকা এবং ধানের মূল্য ৩০ টাকা থেকে ৩৩ টাকা করা হয়েছে।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, “চালের বাজার বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন আমন বাজারে আসতে শুরু করলে চালের দাম আরও কমবে বলে আমরা আশা করছি।” তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে দেড় লাখ টন চাল-গম আমদানির জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হয়েছে, যা পাইপলাইনে আছে। নতুন চালের সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে মূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় আশাবাদী।
কৃষকরা সাধারণত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করেন। তবে, এবার কেজি প্রতি ৩ টাকা মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসতে পারে। এ সিদ্ধান্তের ফলে কৃষকরা আরও উৎসাহিত হবেন এবং তারা সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমন ধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমের পর সঠিক সময়ে আমন সংগ্রহ করা হলে কৃষকের লাভ হয় এবং বাজারেও চালের সরবরাহ নিশ্চিত থাকে। এছাড়া, আমন মৌসুমে উৎপাদিত ধান সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে পরবর্তী সময়ে খাদ্যসংকট মোকাবিলা করা সহজ হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমনের বাম্পার ফলন এবং সরকারের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম কিছুটা বেড়েছিল, তবে নতুন ফসল বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে মূল্য নিম্নমুখী হবে। আমন সংগ্রহে সরকারের গৃহীত এই পদক্ষেপ বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে তাদের ধারণা।
সরকারের এই সংগ্রহ অভিযানকে সুশাসনের আওতায় আনতে মনিটরিং ব্যবস্থাও শক্তিশালী করা হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান সংগ্রহের সময় অনিয়ম রোধে স্থানীয় প্রশাসনকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এর ফলে ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে এবং প্রকৃত কৃষকেরাই তাদের ন্যায্য মূল্য পাবেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় কৃষকদের আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়িয়ে সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেন। এর ফলে কৃষকরা সরাসরি তাদের উৎপাদিত ফসলের জন্য ভালো মূল্য পাবেন। এছাড়া, স্থানীয় খাদ্য গুদামগুলোতে ধান সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
আগামী রবিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া আমন সংগ্রহ অভিযান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের কৃষি খাতের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।