চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগে ক্ষোভ, উপদেষ্টাদের আশ্বাসে শান্তি
দীর্ঘক্ষণ সড়কে অবস্থানের পর উপদেষ্টাদের আশ্বাসে অবশেষে হাসপাতালে ফিরে গেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। দাবি অনুযায়ী, উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে দ্রুতই তাদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা। আহত এই ব্যক্তিরা নানা রকম শারীরিক অসুবিধায় ভুগছেন—কেউ এক পা হারিয়েছেন, কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কারও চোখে ব্যান্ডেজ রয়েছে। তবুও সরকারের ভূমিকার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হন।
পরে সরকারের পক্ষ থেকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান সেখানে যান। এই পাঁচ উপদেষ্টার আশ্বাসে আহতরা শান্ত হন এবং হাসপাতালে ফিরে যান।
“সরকারের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল”: আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল
বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্বীকার করেন, “আমাদের ব্যর্থতা আছে, ভুল আছে। আপনাদের প্রতি আমাদের অনেক অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু যথেষ্ট করতে পারিনি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছিলাম এবং তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে বলেছিলেন যে সবার চিকিৎসাসহ যা কিছু দরকার, তা তিনি করবেন। এটি আমাদের জন্যও হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা।”
এরপর তিনি বিক্ষুব্ধদের প্রতি সরকারের ঘাটতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আশ্বাস দেন যে এই সমস্যার সমাধানে সরকার সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “আগামীকাল দুপুর ২টায় সচিবালয়ে একটি বৈঠক হবে যেখানে আহতদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আলোচনা করা হবে। সেখানে কিভাবে আহতদের পাশে সরকার থাকতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।”
আন্দোলনকারীরা আশা করছেন এই বৈঠকের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগের সমাধান পাওয়া যাবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু সহায়তা পাবেন।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সরকারের অবহেলা তাদেরকে বারবার নিরাশ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে তারা নানা দিক দিয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা না পেয়ে তারা হতাশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন, “আন্দোলনকারীরা যে চারজন উপদেষ্টাকে এখানে আসার দাবি জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজন ঢাকার বাইরে, একজন বিদেশে ও আরেকজন ক্যানসারের রোগী। তারা চাইলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এখানে আসতে পারেন।”
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সালমান নামের একজন বিক্ষোভকারীরা বলেন, “কালকে চার উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব। আমরা বিছানাপত্র নিয়ে এসে সড়কে অবস্থান করেছি এবং সরকারকে সতর্ক করছি যে, এভাবে আমাদের সঙ্গে খেলা করলে আমরা যে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”
বিক্ষুব্ধরা একমত যে, তাদের দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হবে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে আন্দোলনকারীদের শান্ত রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের সকল প্রয়োজন মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।