বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবার কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস (কপ২৯)-এ অংশগ্রহণের জন্য আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে রয়েছেন। ১৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে, তিনি ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। তার ভাষণটি বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে বিশ্বনেতাদের সামনে ড. ইউনূস জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করবেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। কপ২৯ সম্মেলনে তার বক্তব্য বিশ্বনেতাদের জন্য দিকনির্দেশক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বছর সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো “জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সংহতি”। ড. ইউনূস তার ভাষণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা ও পরিবেশগত সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে পারেন।
ড. ইউনূস কপ২৯-এর প্রথম দিনেই বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও তুর্কি ফার্স্ট লেডি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে-সহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেছেন। এসব বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ড. ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ব্যবসা ও মাইক্রোক্রেডিট মডেলের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কপ২৯-এর এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর ও আর্থিক সহায়তার ওপর জোর দিতে পারেন।
ড. ইউনূসের অংশগ্রহণ কপ২৯ সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে তার উপস্থিতি বৈশ্বিক নেতাদের একত্রিত করে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে উৎসাহিত করবে। তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামগ্রিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাতে পারেন।
ড. ইউনূস বরাবরই জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবিক সংকট হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তন কেবল পরিবেশগত সমস্যাই নয়, এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবিচারও সৃষ্টি করছে। সম্মেলনের ভাষণে তিনি উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানাতে পারেন, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।
ড. ইউনূস তার সফরের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি ও টেকসই প্রযুক্তি উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো ও অর্থায়ন বিষয়ে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তিনি উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করার আহ্বান জানান।
ড. ইউনূসের বাকু সফরের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো আল-আজহার আল শরীফের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েবের সঙ্গে তার বৈঠক। এ বৈঠকে মানবতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাদের অবদান নিয়ে আলোচনা হয়। গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েব জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ড. ইউনূসের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
কপ সম্মেলনগুলি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বৈশ্বিক নেতৃত্বের একত্রিত মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। এ বছর আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ২৯ বিশ্ব নেতাদের কাছে একটি নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন। ড. ইউনূসের উপস্থিতি ও বক্তব্য এ সম্মেলনকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যে গুরুতর আকার ধারণ করেছে। কপ২৯ সম্মেলন থেকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেগুলো ভবিষ্যতে জলবায়ু নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ড. ইউনূসের মতো নেতারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় উদ্ভাবনী ধারণা ও সমাধান নিয়ে আসার মাধ্যমে সম্মেলনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে সক্ষম হবেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ কপ২৯ সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ হতে যাচ্ছে। তার অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বনেতাদের অনুপ্রাণিত করবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে এই ধরনের নেতাদের ভূমিকা অপরিহার্য, যাতে পৃথিবীকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য রাখা যায়।