ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে চুরির অভিযোগে এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে স্থানীয় পুলিশ। ধৃত ব্যক্তির নাম মিজানুর তালুকদার। বেশ কিছুদিন ধরেই বারাসত এলাকায় দিনের বেলা চুরির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে মিজানুরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
বারাসত থানার পুলিশ জানায়, পুজোর আগে মিজানুর বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে। সেখানে এসে সে বারাসত হাসপাতালের কাছাকাছি একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। এরপর বারাসত থানা এলাকায় দিনের বেলা বিশেষ করে বিকেলের সময় একাধিক বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, মিজানুর প্রতিবারই বাড়ির গ্রিল ভেঙে বা পাঁচিল টপকে ঘরে প্রবেশ করত এবং মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালিয়ে যেত।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মিজানুর বিভিন্ন বাড়ির পাঁচিল টপকে প্রবেশ করছে বা দরজার গ্রিল ভেঙে ঢুকছে। তবে, আশেপাশের প্রতিবেশীরা তাকে দেখে কখনও সন্দেহ করেনি, কারণ সে এমন ভান করত যেন বাড়ির মালিক নিজে কাজ করাচ্ছেন। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সে দিনের আলোতেই চুরি করত।
মিজানুরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি ঘটনার শিকার হয়েছেন বারাসতের বাসিন্দা প্রবীর। তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে প্রায় ৩২ হাজার টাকা নগদ এবং মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা কিছু গয়না চুরি হয়ে যায়। আমরা সপরিবারে বাইরে ছিলাম, সেই সুযোগে চুরি হয়। তবে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানতে পারি, গত ১১ অক্টোবর আমার বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে থেমেছিল এবং একজন লোক বাড়িতে প্রবেশ করে চুরি করেছে।”
প্রবীরের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে চিহ্নিত করে। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে নগদ অর্থ ও সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্তে জানা গেছে, মিজানুর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চুরি করত। চুরির সময় এমনভাবে আচরণ করত যেন বাড়ির মালিক নিজেই কোনো কাজ করাচ্ছেন। প্রতিবেশীরা তার কার্যকলাপ দেখে কখনও সন্দেহ করেনি। এমনকি আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাও বলত, যাতে কেউ বুঝতে না পারে সে একজন চোর।
পুলিশ জানায়, বারাসত এলাকা থেকে চুরি যাওয়া বেশ কয়েকটি বাড়ি থেকে সোনা, গয়না এবং নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, মিজানুর আরও অনেক বাড়িতে চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। বর্তমানে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, যাতে তার অপরাধের ব্যাপ্তি সম্পর্কে আরও তথ্য বের করা যায়।
বারাসত থানার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া বলেন, “আমরা খতিয়ে দেখছি মিজানুর এর আগেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে এ ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল কিনা। এছাড়াও, তার স্ত্রী এই চুরির কাজে তাকে সাহায্য করেছে কিনা বা চুরির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ আরও জানায়, মিজানুরের গ্রেফতারির পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে, সে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে এই ধরনের চুরির কাজ করে আসছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, তার একটি সংঘবদ্ধ চক্র থাকতে পারে যারা সীমান্ত পার হয়ে চুরি করতে অভ্যস্ত।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চুরির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তবে, মিজানুরের মতো চোরদের ধরতে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার পুলিশের পক্ষে বেশ সহায়ক হয়েছে।
বারাসত এলাকায় একাধিক চুরির ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ আতঙ্কিত ছিলেন। তবে, মিজানুরের গ্রেফতারের পর এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। বারাসতের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা এতদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে চোর ধরা পড়ায় আমরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
পুলিশ এখন বারাসতসহ অন্যান্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি, সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো এবং স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ এড়ানো যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিত। পাশাপাশি, সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। সন্ত্রাস, চুরি, ও অন্যান্য অপরাধ রোধে দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি।
বারাসতের চুরির ঘটনায় বাংলাদেশি নাগরিক মিজানুর তালুকদারের গ্রেফতারির মধ্য দিয়ে পুলিশের সক্রিয়তা এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। তবে, এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে, সেজন্য সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, চোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা উচিত।
পুলিশ এখন তদন্ত করছে মিজানুর ও তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে এবং এর সাথে জড়িত সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্কতা এবং সচেতনতা অপরাধ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।