ঢাকা: সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানির (বিআইএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে তুলেছেন তার ব্যবসা। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ নামে তার অন্তত চারটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তার একমাত্র ছেলে তাসফিক মান্নান।
সম্প্রতি ঢাকার আদালত মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের ওপর একটি মামলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামীম খন্দকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মেজর মান্নান দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং যে কোনো সময় দেশ ত্যাগের চেষ্টা করতে পারেন।
কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা
২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মেজর (অব.) আবদুল মান্নানসহ আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, বিআইএফসির চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা মিলে টেলিকম সার্ভিস এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিনুর রহমানকে জামানত ও বন্ধক ছাড়াই ৮ কোটি টাকা ঋণ দেন। পরবর্তীতে এই অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। তদন্তে উঠে আসে, এই বিপুল অর্থ পাচার করেই মেজর মান্নান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অবস্থিত ‘সানম্যান এক্সপ্রেস গ্লোবাল মানি ট্রান্সফার’ কোম্পানির প্রাক্তন নাম ছিল ‘রুপালী এক্সচেঞ্জ’। এটি বর্তমানে নিউইয়র্কে চারটি শাখা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। প্রধান কার্যালয়টি অবস্থিত ৭৩ স্ট্রিটে এবং অন্যান্য শাখাগুলি ৭৪ স্ট্রিট, অ্যাস্টোরিয়া, ও জামাইকায়। এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে আবদুল মান্নানের ছেলে তাসফিক মান্নান পরিচালনা করছেন। এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে তাদের আরও ১২০টি এজেন্ট রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসুদ রানা তপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অর্থ পাচার করে পালানোর প্রস্তুতি
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মান্নান বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করে তুরস্কে বাড়ি ও ব্যবসা শুরু করেছেন। এ ছাড়া তিনি আইনমন্ত্রী আনিছুল হকের ঘনিষ্ঠজন তৌফিকা করিমের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করে দেশ ছাড়ার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। এরই মাঝে তিনি তার ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব দেন এবং নিজেও পালানোর প্রস্তুতি নেন।
কিন্তু তার দেশত্যাগের খবর পেয়ে দ্রুত তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, মান্নানের বিরুদ্ধে দুদকের আরও ১৪টি মামলা রয়েছে এবং তিনি সাম্প্রতিক সময়ে ২ বার জেল হাজতে যান।