লেবানন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর: লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে এখন পর্যন্ত ৩,১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১৩,৮৫৬ জনেরও বেশি। অক্টোবর ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননেও তার সামরিক অভিযান চালু করেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন এবং ১৬১ জন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই সহিংসতার মধ্যে দক্ষিণ লেবাননের সিডন শহরটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিডন শহরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলার কারণে জাতিসংঘের ইউনিফিল মিশনের পাঁচজন শান্তিরক্ষীসহ বেশ কয়েকজন লেবানিজ নাগরিকও আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিলের পাঁচজন মালয়েশিয়ান শান্তিরক্ষী আহত হন। ইউনিফিল মিশনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা সব পক্ষকে শান্তিরক্ষী এবং বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষায় সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছে। ইউনিফিলের মতে, “যে কোনো বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত, সহিংসতার মাধ্যমে নয়।”
লেবাননে জাতিসংঘের মিশন ইউনিফিলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এবং শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে লেবাননের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে জাতিসংঘের কাছ থেকে কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে লেবাননের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন। লেবাননের শতাধিক সংসদ সদস্য ইউনেস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা লেবাননের প্রাচীন স্থাপনাগুলোকে রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। আইনপ্রণেতারা তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, “বালবেক, টায়ার এবং সাইদার মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলো ধ্বংসের পথে রয়েছে এবং এগুলোর দ্রুত সংরক্ষণ জরুরি।”
এটি উল্লেখ করা হচ্ছে যে, এ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো লেবাননের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসরায়েলের হামলার ফলে সেগুলো ধ্বংসের সম্মুখীন হলে লেবাননের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
লেবাননের বৈরুত-রাফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বর্তমানে লেবাননের জন্য বাইরের বিশ্বের সঙ্গে একমাত্র সংযোগস্থল। বিমানবন্দরের কার্যক্রম হামলার হুমকির মধ্যে থাকায় লেবাননের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের কাছাকাছি স্থানে ইসরায়েলের হামলা চালানোর পর স্থানীয় প্রশাসন জরুরি সতর্কতা জারি করেছে।
বিমানবন্দরটি যে কোনো সময় হামলার লক্ষ্য হতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা লেবাননের নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বড় সংকট তৈরি করবে।
ইসরায়েলি হামলার বিপরীতে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, কিন্তু এর ফলে সাধারণ জনগণের প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘ বারবার এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে এবং সকল পক্ষকে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও লেবাননের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যে সমঝোতার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার তাগিদ দিচ্ছে।
—