দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বৃহস্পতিবার একদিনে রেকর্ড পরিমাণ আলু আমদানি হয়েছে। এদিন ৭১টি ট্রাকে মোট এক হাজার ৮১৮ টন আলু প্রবেশ করেছে, যা বন্দর ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ আমদানি। বাজারে আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ আমদানি করা হলেও এতে দাম কমেছে চার টাকা কেজিতে, যা পাইকার ও ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
দেশে বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আলুর সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে হঠাৎ করেই আলুর দাম বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার গত ৫ সেপ্টেম্বর আলু আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করে। ২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ শুল্কও তুলে নেয়। তবে পড়তা (বিক্রির আগ্রহ) না থাকায় প্রথমদিকে আমদানি শুরু হতে বিলম্ব হয়।
দেশে আলুর মূল্যবৃদ্ধি ও পড়তা বৃদ্ধির পর গত সপ্তাহ থেকে আবার আমদানি শুরু হয়। প্রথম দিকে দিনে ২-৩ ট্রাক করে আলু প্রবেশ করলেও তা বাড়তে বাড়তে ১০ থেকে ২০ ট্রাক এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তা পৌঁছায় ৭১ ট্রাকে। বর্তমানে হিলি বন্দরে ভারত থেকে মূলত ডায়মন্ড ও কাটিনাল এই দুই ধরনের আলু আমদানি করা হচ্ছে।
হিলি বন্দরে আলু কিনতে আসা পাইকার আইয়ুব হোসেন বলেন, “ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কয়েকদিন এভাবে চলার পর দাম বাড়তে থাকে, যা সর্বোচ্চ ৫৭ টাকায় পৌঁছে যায়। এতে আমরা পাইকাররা বেশ সমস্যায় পড়ি। আজ (বৃহস্পতিবার) রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হওয়ায় দাম চার টাকা কমেছে। বর্তমানে কেজি প্রতি ৫১ থেকে ৫৩ টাকায় আলু পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে মোকামে পাঠাতে আমাদের খরচ কমেছে।”
বন্দরের আলু আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন জানান, দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার আলু আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ভারতীয় বাজারেও আলুর দাম বেশি থাকায় চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের বাজারে আলুর সংকট থাকায় আমদানিকারকরা আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, তবে ভারতীয় বাজারের উচ্চমূল্য ও কিছু আমদানি সীমাবদ্ধতা থাকায় সম্পূর্ণ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।”
হিলি স্থলশুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, “হিলি বন্দর দিয়ে আগের তুলনায় আলু আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। যেহেতু এটি কাঁচাপণ্য, তাই বন্দরে প্রবেশের দিনই ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার একদিনে এক হাজার ৮১৮ টন আমদানি হয়েছে, যা আমাদের রেকর্ড।” তিনি আরও জানান, দ্রুত ছাড়পত্র প্রদানের ফলে আমদানি পণ্য বাজারে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে এবং দাম স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, হিলি বন্দর দিয়ে আলু আমদানির কারণে দেশের বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে সাময়িকভাবে দাম কমেছে। তবে ভারতীয় বাজারের উচ্চমূল্য এবং আমদানি প্রক্রিয়ার জটিলতা চাহিদা মেটাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
আলু আমদানিকারক সাহাবুল ইসলাম বলেন, “দেশে আলুর সংকট থাকায় আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। তবে ভারতেও আলুর দাম বেশি, ফলে আমরা পড়তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এজন্য কয়েকদিনের মধ্যে দাম পুনরায় বাড়তে পারে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে দুই দিনের আমদানি একদিনে সম্পন্ন হওয়ায় দাম আপাতত কমেছে।
হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি বৃদ্ধির ফলে দেশের পাইকার ও ভোক্তাদের জন্য একটি স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে। পাইকাররা এখন সহজেই সাশ্রয়ী দামে আলু কিনতে পারছেন, যা বাজারে পণ্য সরবরাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম কমায় ভোক্তাদের স্বস্তি ফিরেছে। পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়ার ফলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়ানো গেলে দেশের বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা এবং মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে আমদানি পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ কৌশল নিয়ে কাজ করলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট এড়ানো সম্ভব।
হিলি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশের আলু বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে ভারতীয় বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।
আলুর মূল্য কমাতে হিলি বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি বর্তমান পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পরিকল্পিতভাবে আমদানি কার্যক্রম চালানো এবং স্থানীয় উৎপাদন ও সংরক্ষণ বাড়ানোই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে।