ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন কি ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করবে?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের জয় ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এই সম্পর্কের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বে কীভাবে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত জোট আরো সুদৃঢ় হতে পারে, সে বিষয়েই রয়েছে ভারতীয় সরকারের আশা।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মসৃণ থাকলেও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মতপার্থক্য এবং নিষেধাজ্ঞার ঘটনা ভারতকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। সম্প্রতি, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য বিভাগ মিলে মোট ৩৯৮টি ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ভারতীয় সংস্থাও।
বাইডেন প্রশাসনের আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ১৯টি ভারতীয় সংস্থা এবং দুজন ভারতীয় নাগরিক অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকে “ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা অভিযোগের ওপর প্রতিষ্ঠিত” বলে নিন্দা জানায়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয় যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ভারতের জন্য অবমাননাকর এবং এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভারতের মতে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। বিশেষ করে ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সামনে রেখে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক, সামরিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে মোদি সরকারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব এবং দ্বিপক্ষীয় সংলাপের সুযোগ বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০২২ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে বাইডেন প্রশাসন বেশ কিছু ভারতীয় সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। এই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে সহায়তা করেছে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ভারতীয় সংস্থাগুলো মূলত বাণিজ্যিক লেনদেনে যুক্ত ছিল বলে জানায় ভারত।
ভারত বরাবরই রাশিয়ার সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়ার বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান না নেয়ার কারণে বাইডেন প্রশাসন ভারতের প্রতি সমালোচনামুখর হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি, বাংলাদেশে নির্বাচন অনিয়মের অভিযোগে ভারতের নীরবতা, এমনকি মার্কিন মুলুকে খালিস্তানপন্থী নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার প্রেক্ষাপটে মোদি সরকারকে নিশানা করেছে বাইডেন প্রশাসন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং সহযোগিতামূলক ছিল। ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কের দৃঢ়তার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছিল। তাই ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় এলে তার নেতৃত্বে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে আশা করছে ভারত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞার বোঝা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে এবং ভারত-মার্কিন বাণিজ্য, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে বলে ধারণা করছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট কূটনৈতিক জটিলতা মিটিয়ে ফেলে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা থাকছে।