ঢাকা, ৭ নভেম্বর: আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রস্তাব করতে দেশটির রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গত বুধবার (৬ নভেম্বর) এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সার্চ কমিটির কাছে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশিদের কাছে এ তালিকা হস্তান্তর করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত একটি গোপনীয় চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রস্তাবিত প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নাম ও তাদের পেশাগত অভিজ্ঞতার বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য তারা যোগ্য এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করেছে।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গত রোববার (৩ নভেম্বর) একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও আগ্রহী ব্যক্তিরা নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। সর্বোচ্চ পাঁচজনের নাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্তসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বা নির্দিষ্ট ইমেইলে (gfp_sec@cabinet.gov.bd) জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাব জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সরকার গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করে। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে অন্যান্য সদস্য হিসেবে রয়েছেন একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, একজন শিক্ষাবিদ এবং দেশের দুই বিশিষ্ট নাগরিক। সার্চ কমিটির কাজ হলো, দেশব্যাপী প্রস্তাবিত প্রার্থীদের তালিকা পর্যালোচনা করে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেশ করা।
বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া সবসময়ই আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর আগে বেশ কয়েকবার নির্বাচন কমিশন গঠনের পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছিল। তবে বর্তমান প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও সংস্থার ভিন্নমত রয়েছে।
বিএনপি মনে করে, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রয়োজন। দলটির নেতা-কর্মীরা আশা করেন, তাদের প্রস্তাবিত ব্যক্তিরা নির্বাচনী ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নির্বাচন কমিশন গঠনে নিরপেক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
আগামী নির্বাচনে দেশবাসীর প্রত্যাশা, একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দেশজুড়ে সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ বিরাজ করছে। অনেকেই আশা করছেন, সার্চ কমিটি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের পেশাগত যোগ্যতা ও সততার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাবিত প্রার্থীদের নাম জমা দিয়ে দলটি তাদের নির্বাচনী অবস্থান ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নিজেদের দাবির পুনরাবৃত্তি করেছে। সার্চ কমিটির পরবর্তী পদক্ষেপ এবং প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলো ও জনগণের দৃষ্টি রয়েছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অপরিসীম। সার্চ কমিটি এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রপতির এই প্রক্রিয়ায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
—