ভোক্তা পর্যায়ে আবারও কমলো তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর দাম। ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১ টাকা কমিয়ে ১,৪৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেয়।
গত চার মাস ধরে এলপিজির দাম বাড়ছিল। আগস্ট মাসে ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল ১,৩৭৭ টাকা। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে তা বেড়ে হয় ১,৪২১ টাকা। অক্টোবর মাসে আবারো মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ১,৪৫৬ টাকায় দাঁড়ায়। তবে, নভেম্বর মাসে এসে ১ টাকার সামান্য হ্রাস পেয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৪৫৫ টাকা।
বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, “প্রতি কেজি এলপিজির মূল্য এ মাসের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১ টাকা ৩২ পয়সা। আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকেই এই নতুন মূল্য কার্যকর হবে।”
কেবল সিলিন্ডারজাত এলপিজি নয়, বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে সরবরাহ করা এলপিজির দামও কমানো হয়েছে। এই পদ্ধতিতে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১১৭ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে কমিয়ে ১১৭ টাকা ২৩ পয়সা করা হয়েছে।
১২ কেজি ছাড়াও অন্যান্য আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দামও কমানো হয়েছে। ৫ কেজি, সাড়ে ১২ কেজি, ১৫ কেজি, ১৬ কেজি, ১৮ কেজি, ২০ কেজি, ২২ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৩ কেজি, ৩৫ কেজি এবং ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দামও সমানুপাতিক হারে হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে, অটো গ্যাসের দামও সামান্য হ্রাস পেয়েছে। প্রতি লিটার অটো গ্যাসের দাম ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে কমিয়ে ৬৬ টাকা ৮১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর মাসে এই দাম ছিল ৬৫ টাকা ২৬ পয়সা।
বিইআরসি জানায়, নভেম্বর মাসের জন্য সৌদি আরামকোর প্রোপেন ও বিউটেনের কন্ট্রাক্ট প্রাইস (সৌদি সিপি) প্রতি মেট্রিক টনে যথাক্রমে ৬৩১ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের এই দামের ওঠানামার কারণে বাংলাদেশেও এলপিজির মূল্য পরিবর্তিত হচ্ছে।
দাম কমার ঘোষণায় গ্রাহকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, ১ টাকার হ্রাস খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তবে, কিছু গ্রাহক এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, মূল্য বৃদ্ধি না হওয়ায় এটি স্বস্তির খবর।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “যদিও দাম কমানোর পরিমাণ খুবই সামান্য, তবুও এটি একটি ইতিবাচক দিক। কমপক্ষে দামের ধারাবাহিক বৃদ্ধির চক্রটা ভাঙা হয়েছে।”
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এলপিজির দাম কমার এই সিদ্ধান্ত মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, যদি বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার বৃদ্ধি পায়, তাহলে দেশে এলপিজির দাম পুনরায় বাড়তে পারে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “বাংলাদেশের এলপিজি বাজার অনেকাংশে আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল। তাই, স্থানীয় পর্যায়ে দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে আন্তর্জাতিক বাজারের দামের ওঠানামার উপর নজর রাখা জরুরি।”
বিইআরসি জানায়, তারা প্রতিমাসেই এলপিজির দাম পর্যালোচনা করে। নভেম্বর মাসের দাম নির্ধারণের পর ডিসেম্বর মাসের জন্যও নতুন দাম ঘোষণা করা হবে। এলপিজির মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী করতে তারা নিয়মিতভাবে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এলপিজির সামান্য মূল্য হ্রাস গ্রাহকদের জন্য স্বস্তির খবর হলেও, এই পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলবে তা এখনই বলা মুশকিল। তবে, বিইআরসি-এর এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামার সাথে সঙ্গতি রেখে স্থানীয় বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।